গণআন্দোলন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিন যুবক। আহত হন বেশ কিছু সাধারণ মানুষ।
এ গণআন্দোলনের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি। উল্টো আন্দোলনকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মাথার উপর চেপে বসেছে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা একাধিক মামলা। এদিকে, দিবসে বন্দি হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীর উম্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়ন বিরোধী আন্দোলন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৮টায় এক বিশাল র্যালি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করবে।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জি নামে একটি বহুজাতিক কোম্পানির ফুলবাড়ীস্থ অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিছিলের ওপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ছাত্র তরিকুল ইসলামসহ আমিন ও সালেকিন নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয় বেশকিছু মিছিলকারী। এদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এখনও সেই গুলির ক্ষত বহন করছে অনেকে।
এরপর ফুলবাড়ীবাসী টানা চারদিনের গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ছয় দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। যা ফুলবাড়ী ছয় দফা চুক্তি বলে পরিচিত। এরপর থেকে এই দিনটিকে ফুলবাড়ীবাসী ও আন্দোলনকারী সংগঠন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এবং সেই সময়ের সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে।
ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েক বছর ধরে ফুলবাড়ীবাসী স্থানীয়ভাবে গঠিত অরাজনৈতিক সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন এবং তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নিয়মিত আন্দোলন করে আসলেও এখন কেবলমাত্র দিবস পালন ছাড়া সেই আন্দোলন করতে দেখা যায়না। ফলে দিবস পালনের মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীর ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন।
এদিকে, ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া এনার্জির প্রধান গেরী এন লাই স্ব-স্ত্রীক তাদের ফকিরপাড়া ওর্য়াকশপ অফিসে মিটিং করে তারা ফুলবাড়ী অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তাদের অফিসে গিয়ে হামলা করে গেরি এনলাইয়ের বহনকৃত কার ভাঙচুর করে এবং আশপাশে রাখা গাড়িগুলো ভাঙচুর ও লুটপাট করে জনতাকে নিয়ে। এ ঘটনায় ওই বছর ১০ অক্টোবর এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বাদী হয়ে আন্দোলকারী সংগঠনের ১৯ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। যা বর্তমানে দিনাজপুরে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অপরদিকে, আন্দোলনকারী সংগঠনের দুইজন নেতা তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু খনি আন্দোলনের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক পরপর দুইবার পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যে পরস্পর নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ফলে এক সময় আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল এখন তা অনেকটায় ভাঙনের সুর শুরু হয়েছে। এ কারণে নেতাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমতে শুরু করেছে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্য সচিব এসএম নুরুজ্জামান জামান বাংলনিউজকে বলেন, আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েনি ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হামিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ২৬ আগস্টের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে লাল স্যালুট দিয়ে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার ১০ বছর কেটে যাচ্ছে, অথচ সেই চুক্তি আজও বাস্তবায়ন করেননি। উল্টো আন্দোলনকারী নেতাদের নামে একের পর এক মামলা করছে ওই বহুজাতিক কোম্পানি। এজন্য তিনি আন্দোলনকারী নেতাদের নামে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বন জানান।
তিনি আরও বলেন, ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের ন্যায় আবারও একটি গণআন্দোলন গড়ে তুলে ছয় দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
এনটি