ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শাহ মখদুম বিমানবন্দর: ঘোষণাতেই আটকা আন্তর্জাতিকীকরণ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
শাহ মখদুম বিমানবন্দর: ঘোষণাতেই আটকা আন্তর্জাতিকীকরণ হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর, বাংলানিউজ ফাইল ফটো

রাজশাহী: হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর। রাজশাহী শহর থেকে দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান।

পবা উপজেলার নওহাটা এলাকায় ১৯৮৪ সালের ১ অক্টোবর এই বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে থেকে একই অবকাঠামোতে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পার করতে যাচ্ছে বিভাগের একমাত্র অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরটি।

বর্তমানে তিনটি সংস্থার ফ্লাইট পরিচালনা হয় এই বিমানবন্দর থেকে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিকীকরণের দাবি দীর্ঘ দিনের।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল। পরিদর্শন শেষে বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময়ও করেন। পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাবির মুখে এ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকীকরণের ঘোষণা দেন। কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ফলে ঘোষণাতেই আটকে আছে শাহ মখদুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের দাবি।

রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ওই সময়ের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহীর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আক্তার জাহান, তৎকালীন রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের ও সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ওই সভায় উপস্থিত থেকে এ ব্যাপারে তাদের দাবি ও মতামত তুলে ধরেছিলেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন তিনটি করে প্লেন ওঠা-নামা করছে। তাও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আরও বেশি সংখ্যক প্লেন চলাচলের ব্যবস্থা করা উচিত। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করি। মানুষ ঢাকা থেকে সকালে আকাশপথে রাজশাহী আসবে, কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে যাবে। প্লেনের সিডিউল এভাবে সাজানোরও পরামর্শ দেন খায়রুজ্জামান লিটন।

রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প হচ্ছে। তাই এখানে আগামীতে বিদেশিদের যাতায়াত আরও বাড়বে। এজন্য কার্গো প্লেন চলাচলের ব্যবস্থাসহ বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তোলার দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।

পরে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর নিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তা পেলে জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করা হবে।

সভায় তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল বলেন, আগে শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর এবং আমদানি-রপ্তানি কার্গো প্লেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পেশ করা হবে। এভাবে অন্য প্রক্রিয়া শেষে পর্যায়ক্রমে এটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেই ঘোষণারও এক বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু কার্যত কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

ওই সময় জানানো হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহী বিমানবন্দরে প্রায় ১২ কোটি টাকার সংস্কার কাজ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ইতোমধ্যে ৫৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে বিমাবন্দরের সীমানা ও রানওয়ে বর্ধিতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন তৈরি ছাড়া এখনও এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিকীকরণের প্রক্রিয়া আর বেশি দূর এগোয়নি।

সার্বিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সেতাফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও ৫৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। এজন্য রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগও করা হয়। আমি যত দূর জানি, এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এরপর আর বিশেষ কিছুই জানি না। নতুন কোনো নির্দেশনাও আমার কাছে নেই।

এদিকে, দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে এটিকে দ্রুত আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা খুবই জরুরি। বিষয়টি নিয়ে আমি জাতীয় সংসদে একাধিকবার কথা বলেছি। এছাড়া মন্ত্রণালয়েও আমার এ দাবির কথা জানিয়েছি। গত বছর তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বিমানবন্দর পরিদর্শন করে গেছেন। তাই বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকার বিবেচনা করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

এক নজরে শাহ মখদুম (রহ.) বিমান বন্দর:
রাজশাহীর নওহাটায় ১৬২ একর জমির ওপর ১৯৮৪ সালে হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিমানবন্দরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৪ ফুট (২০ মিটার) ওপরে অবস্থিত। এর মাত্র একটি রানওয়ে আছে। যার দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ফুট। আর প্রস্থে ৯৮ ফুট। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৬ সালের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত বিমানবন্দরটি ছিল লাভজনক অবস্থানে। একপর্যায়ে মাত্র দু’জন যাত্রী নিয়েও প্লেন উড়েছে এই বিমানবন্দর থেকে। এই রুগ্ণদশা চলতে চলতে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে অভ্যন্তরীণ এই রুটে প্লেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

তবে ২০১০ সালে গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি ও ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান বৈমানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে বিমানবন্দরটিতে। ২০১১ সালে সপ্তাহে দু’দিন ঢাকা থেকে সৈয়দপুর হয়ে রাজশাহী পৌঁছায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দু’টি ফ্লাইট। তবে ক’দিন চলার পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল আবারও ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। রাজশাহী-ঢাকা অভ্যন্তরীণ রুটে ওড়া শুরু করে পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ূরপঙ্খী’ নামে কানাডার তৈরি ৭৪ আসনের ড্যাশ-৮-কিউ-৪০০ মডেলের দু’টি প্লেন দেওয়া হয় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য। এখন বিমান ছাড়াও বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা ও নভোয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমানবন্দরটিতে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৯
এসএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।