দুই শিশুর দুধপানের বয়সই পেরোয়নি। যার পেরিয়েছে, সে ফুটপাতেই প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকা মায়ের মাথায় হাত ছুঁইয়ে পানি দিচ্ছে।
রাজধানীর ফুটপাতে চলতে-ফিরতে প্রায়ই চোখে পড়ে এমন ‘ছোট ছোট’ দুঃখের ফ্রেম। তাই এই ‘অতি সাধারণ’ দুঃখের চিত্রে ফিরে চাইবার সময় কার? হেঁটে চলে ব্যস্ত নাগরিকের দল।
এরমধ্যেই থেমে যান সুজন মাহমুদ নামে এক পথচারী। কেন যেন তার মনটা কেঁপে ওঠে। সবাই যদি এভাবে ‘না দেখে’ চলে যায়, তিনটা শিশু তাদের মাকে নিয়ে কী করবে?সুজন মাহমুদ এগিয়ে যান অসুস্থ নারী ও তাকে ঘিরে বসা তিন শিশুর দিকে। অসুস্থ শরীরে যতখানি শক্তি ছিল, ততখানি দিয়ে সুজন মাহমুদকে সেই নারী বলেন তার দুর্দশার কথা।
সেই নারী জানান, তার নাম মমতাজ বেগম (৩০)। স্বামীর নাম বাহাদুর। গ্রামের বাড়ি খুলনা। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় থাকতেন। তখন স্বামী যে টুকটাক আয় রোজগার করতেন, তা দিয়ে দিন চলে যেতো তাদের। এখন তার যে তিন সন্তান, তারা হলো রুপালী (৬) এবং মোহাম্মদ হাসান ও মোহাম্মদ হোসেন। হাসান-হোসেন যমজ, দুইজনের বয়স আড়াই বছর। এরা ভূমিষ্ট হওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান বাহাদুর। অভাবের সংসারে নিয়তি চাপিয়ে দেয় আরও দুর্দশা। এখন মাতৃত্বকালীন অসুস্থতা মমতাজকে চেপে ধরেছে। প্রথমদিকে কিছুটা কুলিয়ে উঠতে পারলেও এখন আর পারছেন না।
সুজন বুঝতে পারেন, মমতাজের শরীরে ডিহাইড্রেশনসহ নানা রোগ জেঁকে বসেছে। তখনই তিনি জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। তাদের জানোনোর পর শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে একটি ভ্যানে করে তিন শিশুসহ তাদের মাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সুজন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ওই নারীর বড় সন্তান কিছুক্ষণ পরপরই তার মাকে পানি খাওয়াচ্ছিল। অন্য দু’জন ‘মা মা’ বলে ডাকছিল। এই দৃশ্য দেখে বেশি খারাপ লাগছিল। কারণ আমারও দুই যমজ সন্তান আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৯
এজেডএস/এইচএ/