অবৈধ দখলদাররা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ভূমিহীন দেখিয়ে ওই জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন এবং সেই জমির কিছু অংশ বিক্রিও করে দিয়েছেন।
জানা যায়, দিঘলীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ওই জমির অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন।
অভিযোগ অনুযায়ী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মানিকগঞ্জ জেলা যখন মহকুমা ছিল তখন মো. মজিবর রহমান, আব্দুল খালেক, আনোয়ারুল হক, হাবিবুর রহমান, মো. মতিয়ার রহমান, মো. আমিরুল হকের নামে ভূমিহীন হিসেবে ওই খাস জমি বন্দোবস্ত নেন তাদের পূর্বপুরুষ। তখন তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৫ বছর। বন্দোবস্ত দলিলে কৃষি জমি দেখালেও রেকর্ডে বিল রয়েছে। এছাড়া কাগজে-কলমে নিজেদের ভূমিহীন দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তারা ছিলেন বিত্তবান ও প্রভাবশালী।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বন্দোবস্ত পাওয়ার কিছুদিন পরে ওই জমির কিছু অংশ বিক্রি করে দেওয়া হয় আব্দুর রসিদ ও মোন্তাজ আলী নামে দুই ব্যক্তির কাছে। পরবর্তীকালে ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭০ এর মধ্যে ওই জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেন। ১৯৭৭ সালে তারা নিজেদের নামে মহকুমা প্রশাসককে দিয়ে কবুলতনামা দলিল করে নেন। সেসময় তাদের বয়স ছিল ৮ বছর।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাটুরিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত ৩১ জুলাই সরেজমিনে তদন্ত করে দিঘলীয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. আজাহার আলীকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। উল্লেখিত জমি সিএস রেকর্ডে ভূমির শ্রেণী নদী ছিল। এস এ রেকর্ডে জমির শ্রেণী রাস্তা ও বিল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আরএস রেকর্ডে ওই জমির শ্রেণী দেখানো হয়েছে বোর, বিল ও নালা হিসেবে।
জমির বর্তমান দখলদারদের মধ্যে আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা মতিয়ার রহমান সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য এই জমি লিজ নিয়েছিলেন। বর্তমানে আমরা মোট ৮ জন ওই জমি ভোগ দখল করছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই জমির রের্কড অনুসারে মালিক হয়েছি।
দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান মতি বাংলানিউজকে বলেন, দখলকারীরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারের ৮ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছেন। জমি রেকর্ড করার সময় অভিভাবকরা তাদের নামে করেছিলেন। দখলদারীরা যখন পত্তন নেন তখন তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৫ বছর। আর যখন রেকর্ড করা হয় তখন তাদের বয়স ৮ বছর বলে জানান তিনি। এমনকি একাধিক ব্যক্তির কাছে এই জমির কিছু অংশ বিক্রিও করেছেন তারা।
সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে কুলসুম শম্পা বাংলানিউজকে বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফিরতি কোনো নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে সারাদেশে কৃষি, অকৃষি খাস জমির পরিমাণ ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬৮ একর। এর মধ্যে বিপুল পরিমাণ খাস জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে অক্টোবরে জাতীয় কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেদখল জমি উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯
আরএ