বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন। ভূমিকম্পে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় রংপুর সিটি করপোরেশন এবং টাঙ্গাইল, রাঙামাটি ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার সঙ্গে অধিদপ্তরের সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এনামুর রহমান বলেন, সম্প্রতি দেশের আশপাশে বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। আমাদের অবস্থান দূরে হওয়ায় রক্ষা পেয়েছি। তবে ভূমিকম্পের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ইমারত বিধিমালা সংশোধন, প্রশিক্ষণ ও স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করা হয়েছে। যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে জাপানকে অনুসরণ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইডল হবে জাপান। জাপান কীভাবে তার নাগরিকদের সুরক্ষায় কাজ করছে, তা অনুসরণ করা হবে। যেহেতু আমরা ভূমিকম্প ছাড়া সব দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি, তাই এখন ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকেও নাগরিকদের রক্ষা করা হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ২২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে জানিয়ে ডা. এনামুর রহমান বলেন, সারাদেশকে কাভারেজ করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা সম্ভব হয়নি। তাই আমরা নতুন করে এক হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প নিয়েছি। ফায়ার সার্ভিসকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিতে হবে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকেও যন্ত্রপাতি দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জির দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আমাদের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিন, তাহলে আমরা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবো।
এনামুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রথমেই বঙ্গভবন ও গণভবন রক্ষা করতে কাজ করছি। কারণ সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হলে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ থাকবে না। তারপর সচিবালয় রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কারণ সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হলে দেশের প্রশাসন চালানোর মানুষ থাকবে না। ‘ভূমিকম্পে একজন নাগরিকেরও প্রাণহানি হতে দেওয়া হবে না। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়েও একজন মানুষ মারা যায়নি। দেশের মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছি। তাই আর কোনো মানুষের প্রাণহানি হবে না। ’
সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে পরিকল্পনা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোড ডিভাইডার তৈরি করতে হবে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। সড়কে টেকসই উন্নয়ন হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত শার্লোটা সিল্টার বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে সুইডেন। ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় কিছু জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। ভবন ভূমিকম্প-সহনীয় করে গড়ে তুলতে হবে। ভবনের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ। প্রচুর গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অতএব দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ইউএনডিপির পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনআরপির ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মো. মোহসীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মো. শাহাদাৎ হোসেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত প্রমুখ।
চুক্তির আওতায় প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভূমিকম্প মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৯
টিএম/এইচএ/