সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে মোট ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৯৬৩ সালে ৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, যা বাংলাদেশের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।
নাব্য হারানোর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। নদীর পানি কমে যাওয়ায় একদিকে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে সেচ কাযর্ক্রমও ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া, বন্যার পানিপ্রবাহে বাধা পাওয়ায় দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।
নৌপথের নাব্য ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শেরপুরের জিনাই, রংপুরের ঘাঘট, জামালপুরের বংশী ও গাজীপুরের নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রকল্প। ‘শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি নিশ্চিতকরণ, নৌপথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা’ নামে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অক্টোবর ২০১৯ থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান (পরিকল্পনা) মো. উবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, নৌপথ কমতে কমতে এখন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারে ঠেকেছে। তবে, এটা দাপ্তরিক কোনো হিসাব নয়। ১৯৮৯ সালের পরে আর কোনো জরিপ হয়নি। ৩০ বছর আগে যে জরিপ করা হয়, তখন নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল ছয় হাজার কিলোমিটার।
তিনি বলেন, নৌপথের নাব্য রক্ষায় নদী ড্রেজিং করা হবে, যেন বন্যায় দেশবাসী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এছাড়া, নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধার্থেও কয়েকটি নদী ড্রেজিং করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে ১৬ হাজার ২৪টি, প্রকৌশল জরিপ করা হবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার। বিআইডাব্লিউটিএ’র ড্রেজারের মাধ্যমে ২০৩ দশমিক ৭৯ লাখ ঘনমিটার ও বেসরকারি-এক্সকাভেটর ড্রেজার দিয়ে ১ হাজার ৯৫৯ দশমিত ৬৬ লাখ ঘনমিটার খনন করা হবে। পরামর্শক নিয়োগ, নৌ-চলাচল সহায়ক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হবে। এরমধ্যে অন্যতম ৩০টি লাইটেড বয়া, ৫০টি স্পেরিক্যাল বয়া, দেড় হাজারটি এলইডি বিকন লাইট, দেড় হাজার পিসি পোল, আড়ার হাজার লোহা ও বাঁশের মার্কা, ১০০টি স্কচ লিট পেপার।
নৌপথের নাব্য উন্নয়নের ৭০ শতাংশ ড্রেজিং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হবে, যার প্রতি ঘনমিটারে ১৭০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। অভ্যন্তরীণ নৌপথে সারাদেশে বছরে যে পরিমাণ পলি জমা হয়, তা অপসারণের জন্য বিআইডাব্লিউটিএ’র নিজস্ব ড্রেজার যথেষ্ট নয়। কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ড্রেজিং কাজ সরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে আর বাকি ৭০ শতাংশ কাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ড্রেজিং বাবদ প্রতি ঘন মিটারে ব্যয় ১৯০ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছিল। এ ব্যয় মূলত নদীর বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। পরে, বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে প্রতি ঘন মিটার ড্রেজিংয়ের দর ১৭০ টাকা ও সরকারি ড্রেজারে প্রতি ঘন মিটারে ড্রেজিং দর ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নদীগুলোর একটা বিরাট অংশ শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়। এছাড়া প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ লুপকাট রয়েছে। এ অংশগুলো এক্সকাভেটর দিয়ে খনন করতে হবে। কিন্তু, এক্সকাভেটর দিয়ে খননের অংশ ও ব্যয় আলাদা করা হয়নি।
এ প্রকল্পের মতো একইভাবে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার করা হবে। একই সঙ্গে সারাদেশে নতুন করে নৌপথের জরিপ করবে সরকার।
জানা যায়, বাংলাদেশের নদীগুলোতে প্রতিবছর বন্যায় পাঁচ মিলিয়ন কিউসেক পানি ও ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন টন পলি পরিবাহিত হয়, যা সারাবিশ্বে পরিবাহিত পলির ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে, বাংলাদেশের নদীগুলো ধীরে ধীরে নাব্য হারাচ্ছে ও নৌপথের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নৌপথের নাব্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ড্রেজিং জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯
এমআইএস/একে