জানা যায়, সাজেদা বেগমের ছেলে স্বর্গ ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলের লেখাপড়া ও দেখাশোনা করার জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকেন।
পটুয়াখালীর বঙ্গোপসাগর মোহনায় এক বিশাল জলরাশির উপর ভাসমান দ্বীপাঞ্চল রাঙ্গাবালি উপজেলা। একদিকে সাগর ও তিনদিকে নদী দ্বারা এক বিচ্ছিন্ন এক জনপদের মানুষকে শিক্ষার হাতছানি থেকে দূরে রাখতে পারেনি। বিচ্ছিন্ন এই জনপদে সেই সময়ের কিছু শিক্ষানুরাগী মানুষের প্রচেষ্টায় ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গাবালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে শিক্ষার মানোন্নায়নে প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল জাতীয়করণ করেন। কিন্তু উপজেলা সদরে অবস্থিত প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী স্কুলটি খারাপ রেজাল্টের কারণে বাদ পড়ে। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসরুমে উপস্থিত হয়ে পাঠদান করানো থেকে বিরত থাকেন বছরের অধিকাংশ সময়।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রাজনৈতিক বলয়ের ক্ষমতার কারণে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবেই চলে আসছে বহু বছর। তবে শিক্ষক সাজেদা বেগম সব রীতির ভাঙন ঘটিয়ে পুরো নয় মাস স্কুলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। সাজেদা বেগমের স্বামী সাইদুজ্জামান মামুন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডানহাত।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসিব, লাবনী জাহান, নবম শ্রেণির মোসাম্মৎ রাজনী, ফয়সাল হোসেন, জেনি আকতার, অষ্টম শ্রেণির সাকিল মিয়া, মুক্তা আকতার, রিহাদ, সপ্তম শ্রেণির জুই মনি, শীমলা, ফিরোজ আলম, রোয়েল মিয়া, সিনথিয়া আকতার অহনাসহ শতাধিক শিক্ষার্থী ও অনেক অভিভাবক লিখিতভাবে জানিয়েছেন, চলতি বছরে একদিন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাজেদা বেগম শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হননি।
এর সত্যতা প্রমাণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের জানুয়ারি-এপ্রিল চার মাসের হাজিরা খাতায় একদিনও তার স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় রয়েছেন। ঈদুল ফিতরের পর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। তার অবর্তমানে হাজিরা খাতায় প্রবীর চন্দ্র প্রক্সি স্বাক্ষর দিতেন। বর্তমানে তিনিও বিনা ছুটিতে একমাস ধরে ভারতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বাংলানিউজকে জানান, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে বেতন-ভাতা তুলছেন শিক্ষক সাজেদা বেগম।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক সাজেদা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি টাইফয়েড আক্রান্ত এজন্য দেড়মাস ধরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছি। এরআগে স্কুলে উপস্থিত ছিলাম। ’
‘হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর কেন নাই’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভুলে গেছি স্বাক্ষর দিয়েছি কী না। ’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুজ্জামান মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাজিরা খাতায় শিক্ষক সাজেদা বেগমের স্বাক্ষর আছে কী না তা না দেখে বলতে পারবো না। তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তাই তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ছুটি নিয়েছেন।
‘দেড়মাস ছুটি দেওয়ার এখতিয়ার আপনার আছে কী না’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদ ছুটি দিতে পারেন। ম্যানেজিং কমিটির কাছে ছুটির জন্য তিনি মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান এ সাংবাদিকের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে ব্যাপারটি মিটমাট করার প্রস্তাব দেন।
রাঙ্গাবালি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোকলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটা আমি জানি। কিন্তু বিচ্ছিন্ন জনপদ দূর থেকে এসে এখানে চাকরি করি, তাছাড়া অভিযুক্তের স্বামী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ জাঙ্গাগীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর আব্বাস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এখনো এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের উপ পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই শিক্ষকের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
এনটি