বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে ছাত্রলীগের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দলটির শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাৎ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বাংলানিউজকে একথা জানান।
নতুন করে এসব স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই স্থাপনাগুলো হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও নান্দনিক সৌন্দর্যের।
এরই মধ্যে পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি
জরাজীর্ণ টিএসসির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে টিএসসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। সব মিলিয়ে তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৪-৫ হাজার। এখন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক সংখ্যা মিলিয়ে ৪০ হাজারের ওপরে। টিএসসির সুযোগ-সুবিধা এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অপ্রতুল।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টিএসসিকে আরও বড় ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মিলিত করে দেওয়া হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো, সবাই যেন আরও বেশি খোলামেলা পরিবেশে কাজ করতে পারে।
এখনকারটির চেয়ে কয়েকগুণ বড় ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বড় অডিটোরিয়াম, বড় ক্যাফেটেরিয়া করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
অত্যাধুনিক ও আরও বড় করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ভবন অনেক পুরাতন। সেখানে রোগীর অনেক চাপ। এখানে আধুনিক বিল্ডিং করে দেওয়া হবে, যেন ৪-৫ হাজার রোগীকে এক সঙ্গে সেবা দেওয়া যায়।
জাতীয় জাদুঘর এবং পাবলিক লাইব্রেরি
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘর এবং পাবলিক লাইব্রেরি পুরো এলাকাকে একই বাউন্ডারির মধ্যে নিয়ে আসা হবে। এখানে আরও বড় পরিসরে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘর ও পাবলিক লাইব্রেরি নির্মিত হলে এর নান্দনিক সৌন্দর্য মানুষকে আকর্ষণ করবে এবং আরও বেশি মানুষ এখানে আসতে পারবেন এবং আধুনিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
তিনি জানান, সেখানকার পুকুরটিকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যেন এটি মানুষকে প্রশান্তি এনে দেয়।
উন্নয়ন কাজগুলোর সুবিধার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো করা হলে এই এলাকার নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। মানুষ সার্বিকভাবে এর মাধ্যমে লাভবান হবে।
টিএসসিতে মেট্রোরেল স্টেশন
টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের এ নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে এমন কিছু করবে না সরকার।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির, কম্পিউটারাইজড, ইলেকট্রিক ট্রেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে মেট্রোরেল হবে সাউন্ডপ্রুফ। এটা এমন রেল হবে না যে খটর খটর শব্দ করে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা লেখা-পড়া করবে তারা কোনো শব্দ পাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেলের রুট আমি নিজে ঠিক করেছি। জনসাধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সর্বাধিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে।
‘রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মেট্রোরেলের স্টেশন যেমন সর্বসাধারণের সুবিধা নিশ্চিত করবে একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল এবং বারডেম হাসপাতালের রোগীদের কথা চিন্তা করে শাহবাগে একটি স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টিএসটিসতে একটি প্লাটফর্ম রাখা হয়েছে। এভাবে প্রতি এক কিলোমিটার পরপর স্টেশন রাখা হয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যে প্লাটফর্ম হবে তা অনেক বড় করে গড়া হবে। যেন একসঙ্গে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে।
ছাত্রছাত্রীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধা ও বইমেলার কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমির সামনে একটি বড় আধুনিক আন্ডারপাস করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের এসব নিয়ে অহেতুক চিন্তা না করার আহ্বান জানান।
রাজধানীকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরো ঢাকাকে মেট্রোরেলের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। কোথাও আন্ডারগ্রাউন্ড, কোথাও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হবে। ঢাকাবাসীকে সুখবর দিতে চাই, চারপাশে এলিভেটেড সার্কুলার রোড করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ/