এই বিশ্বাসই থেকে সম্মিলিত শ্রদ্ধা প্রদর্শনে এগিয়ে এসেছেন তারা। মোদ্দা কথা, এখানে বিশ্বাসের ভীত যতটা না সুদৃঢ় তার অপেক্ষা আতঙ্ক অনেক বেশি সক্রিয়- সংগঠিত একটি চা জনগোষ্ঠীর মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিতে।
প্রায় দেড়শ বছরের বাংলাদেশের চায়ের ইতিহাসে নারী চা- শ্রমিকরাই পাতা চয়ন করে থাকেন। রোদের উত্তাপে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারাই চা-শিল্পের বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
চা-গাছগুলো দীর্ঘপ্রসারিত উঁচু-নিচু টিলার পাদদেশে হওয়ার ধরুন নানান প্রজাতির প্রাণীদের বাসবাস ওই এলাকায়। সরীসৃপ প্রাণী তাদের মধ্যে অন্যতম। চা-গাছগুলো অতিমাত্রায় ঘন এবং পরস্পরের সঙ্গে এতটাই শক্তভাবে জড়িত যে তাদের ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করা কিছুটা কষ্টদায়ক। এভাবে ঘন হয়ে থাকায় পায়ের নিচের অংশগুলো ওপর থেকে ভালো করে দেখাই যায় না। তাই সাপ জাতীয় কোনো প্রাণীর ওপর না দেখে পা পড়লেই মহাবিপদ! বিষধর সাপ হলে তো আর কথাই নেই! ছোবলময় মৃত্যু-এ ব্যাপারটি অবধারিত হয়ে ওঠে।
এমন আতঙ্ক-উদ্বেগ থেকেই চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীদের মধ্যে এসেছে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সম্মিলিত বিশ্বাস। এ সর্প-ভাস্কর্যটি প্রায় মাসখানেক আগে নির্মাণ করা হয়েছে। ভীতি এবং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা স্থাপনের লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার মাজহিদি চা-বাগানের ১৭ নম্বর সেকশনে দুইটি বিষধর সাপের প্রতিকৃতি স্থাপিত হয়েছে। এগুলো সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ও রঙের কারুকাজে সুসজ্জিত। চা-শ্রমিকদের কাজে এই সর্প-ভাস্কর্যটিকে ‘নাগবাবা’ বলে কথিত।
তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। চা-বাগানের শান্ত-নির্জন পাকাপথ ধরে এগিয়ে আসা স্বপন সাঁওতাল ও রঞ্জন বাউরি এ সর্প-ভাষ্কর্য সম্পর্কে বলেন, এখানে মারাত্মক বিষাক্ত দুটো গোখরা সাপকে প্রায়ই পাওয়া যায়। এছাড়া খরিস, নীলডুগি, দাঁড়াশের দেখা প্রায়ই হয়। এই সাপ যেন আমাদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না করে তার জন্যই আমরা সবাই মিলে এটি তৈরি করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, সাপদের শ্রদ্ধা দেখালে ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
প্রতি মঙ্গলবার এখানে পূজা দেওয়া হয়। নারী চা-শ্রমিকদের জন্যই মূলত এটি করা। কারণ, নারী চা-শ্রমিকরা তো পাতা তোলার সময় নিচে দিকে দেখতে পারে না। তাই এই নাগবাবার আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা করা হয়। এটি আমাদের বিশ্বাস বলেন চা-শ্রমিক বাদল ভূঁইয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
বিবিবি/এএটি