ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিয়ে করে বর নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরলো কনে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
বিয়ে করে বর নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরলো কনে! বিয়ে করতে বরের বাড়িতে কনে। ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: বিয়ে করতে সাধারণত ধুমধাম করে বর কনের বাড়িতে যায় বরযাত্রী নিয়ে। বরযাত্রী আর কনে পক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে বিয়েবাড়ি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বউ নিয়ে বাড়ি ফেরে বর। এই চিরাচরিত রীতি ভেঙে এবার বিয়ে করে বর নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরেছেন কনে। 

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ব্যতিক্রমী এই বিয়েটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার চৌগাছা গ্রামে।

কনে চুয়াডাঙ্গা জেলার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে কলেজছাত্রী খাদিজা আকতার।

 বর গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির মেহেরপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম।  

নতুন নিয়মে বিয়ে। তাই ছেলে পক্ষের আত্মীয়-স্বজন আগ্রহ ভরেই এসেছেন দাওয়াত খেতে। জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সুধিজন সবার মধ্যেই ছিল আলাদা কৌতুহল। বিয়েতে ৫০ হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে বিয়ের মাহফিলেই তা পরিশোধ করেন বরপক্ষ। কনে নিজে বিয়ের সাজে সাঁজোয়া প্রাইভেটকারে এবং ৫টি মাইক্রোবাসে প্রায় ৬৫ জন কনেযাত্রী আসে। কনে বিয়েবাড়িতে এসে পৌঁছালে বরপক্ষের লোকজন গাড়ি থেকে নামিয়ে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। গেটে মিস্টি মুখ করার পর ফিতা কেটে ভেতরে ঢোকেন কনে। এরপর কনের আসনে বসিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়।

গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তার স্ত্রী পাপিয়া আক্তার বরপক্ষের দাওয়াতে এসে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সাধারণত এতদিন কনে পক্ষের বিয়েবাড়িতে গেছি। বা বরপক্ষের বরযাত্রী হয়ে গিয়েছি। আজকের এ বিয়েটাতে আলাদা একটা সংস্কৃতি ও মাত্রা যোগ হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ এই বিয়ের মাধ্যমে একটা নতুন নিয়মের সৃষ্টি হলো।  

কনে খাদিজা আকতার ও বর তরিকুল ইসলাম।  ছবি: বাংলানিউজসামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল ইসলাম ও লুৎফুন্নেছা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেছেন, নতুন একটি কালচার, নতুন যুগের সুচনা ঘটলো এই বিয়ের মাধ্যমে।

এছাড়া পুরুষতান্ত্রিকতার উপরেও একটা প্রভাব ফেলতে পারবে এ নিয়মের মাধ্যমে। যাই হোক আমরা আশা করছি এটা নতুন মাত্রা যোগাবে।

কনে খাদিজা আক্তার তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, নারী পুরুষের সমান অধিকার বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় না। আমার থেকেই শুরু হোক এ অধিকারের প্রশ্ন।

বর তরিকুল ইসলাম তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন এই বিয়ের মাধ্যমে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বরের বাবা আব্দুল মাবুদ বলেছেন, পুরুষশাসিত সমাজে যে রীতিটা চালু হয়ে এসেছে সেটাকে ভেঙে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা উচিত।

তিনি বলেন, ছেলের বিয়েতে আমি খরচ করব এখানে কনে পক্ষের খরচ যাতে না হয় এবং নারী পুরুষের মাঝে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে এই দিক বিবেচনা করে চিরাচরিত রীতির বাইরে গিয়ে এভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।

পুরাতন রীতি ভেঙে বিয়ের এ নতুন নিয়ম ধর্মীয় বাধা বা সামাজিক সমালোচনা যাই হোক সমাজে নারী পুরুষের অধিকারের প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং আগামীতে এ প্রক্রিয়া অনেকেই গ্রহণ করবেন এ প্রত্যাশা করছেন বর ও কনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।