সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মতিঝিল-ফরিরাপুলে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, আজাদ বয়েজ ক্লাবসহ অনন্য ক্লাবও বন্ধ রয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্লাবগুলো সিলগালা করে করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে ক্যাসিনোসহ জুয়া খেলার বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়। সেই সঙ্গে এসব ক্লাব থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ অর্থসহ মাদক দ্রব্য।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব ক্লাস পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অধিকাংশ-ই ইতোমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। তবে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন রাঘব-বোয়ালেরা। যাদের সাধারণ মানুষ কখনও দেখেও না। আড়ালে থেকেই এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী আওলাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অভিযান শুরু হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বরে। গতকালও (রোববার) কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ফলে অনেকেই পালিয়ে গেছে। উচিত ছিল ঢাকার সবগুলো ক্লাবে এক সঙ্গে অভিযান চালানো, এতে রাঘব-বোয়ালেরাও ধরা পড়তো। কিন্তু তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সবখাতেই নৈরাজ্য চলছে। তাই সব জায়গায় এ উদ্যোগ নিলে আরো ভালো হবে।
ইয়ং মেন্স ক্লাবের সামনে খাবার হোটেল ব্যবসায়ী আব্বাস আলী জানান, গত কয়েক বছর ধরেই এই ক্লাবে ২৪ ঘণ্টাই লোকজনের আনাগোনা থাকতো। অনেক ভিআইপি লোক গাড়িতে চড়ে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু অভিযানের পর সবই ফাঁকা। আশপাশেও আসে না কেউ।
তিনি বলেন, ওই সময় মানুষের আনাগোনা বেশি হওয়ায় বিক্রিও ছিলো বেশি। কিন্তু এখন আমাদের হোটেলের বেচাকেনা কমে গেছে।
দিলকুশা ক্লাবের সামনে ২০০০ সাল থেকে চা-পান ও সিগারেট বিক্রি করেন কুমিল্লার আলী হোসেন স্বপন। তিনিও দেখেছেন এই ক্লাবের জৌলুস। কিন্তু এখন লোকজন আসা একম নেই।
তিনি বলেন, ক্লাবগুলোতে জুয়ার আসর বসার কারণে এখানে ২৪ ঘণ্টা লোকজনের ভিড় থাকত। বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর বসতো এখানে।
‘শুধু ঢাকায়-ই নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও গাড়িতে করে লোকজন এখানে আসত জুয়া খেলতে। আমার দোকানে তখন বেচাকেনাও যথেষ্ট ভালো হতো। আগের তুলনায় বর্তমানে ব্যবসা নেই বললেই চলে। ক্যাসিনো চললে দম ফেলার সময় পেতাম না। সবসময় ব্যস্ততা লেগে থাকত। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, কয়েকজন নেপালি নাগরিক ক্লাবের আড়ালে রাজধানীতে পশ্চিমা দেশের ধাঁচে এই ক্যাসিনো ব্যবসা বসায়। মূলত ১১ নেপালির হাত ধরেই ঢাকায় একের পর এক ক্যাসিনো গড়ে ওঠে।
আর এতে সহযোগিতা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। তাদের ম্যানেজ করেই নেপালিরা ক্যাসিনোর বিস্তার করে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাসিনো চালানোর জন্য নেপাল থেকে প্রশিক্ষিত জুয়াড়িদের এনে কাজে লাগানো হতো। ঢাকায় ক্যাসিনো বিস্তারে নেপালি নাগরিক বিনোদ, রাজকুমার, দিনেশ শর্মা, দিনেশ কুমার, ছোট রাজ কুমার, বল্লভ, বিজয়, সুরেশ বাটেল, কৃষ্ণা, জিতেন্দ্র ও নেপালি বাবার নাম এসেছে। তবে তাদের কাউকে আটক করা যায়নি।
সূত্র জানায়, এই চক্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকা যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন সম্রাট। তার সঙ্গে ছিলেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। র্যাবের হাতে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই জানিয়েছেন খালেদ ভূঁইয়া।
ডিএমপির মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ক্লাবগুলো সিলগালা করা আছে। আমরাও সতর্কতায় রয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৯
আরকেআর/এমএ