এদিন মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ভক্ত-সন্তানদের দর্শন দিতে মর্ত্যলোকে দেবী থাকবেন আগামী মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পর্যন্ত।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শারদীয় দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শুরুর আগের সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন এক অত্যাবশ্যকীয় আচার। শারদীয় এ উৎসবে বোধনের বিশেষ উল্লেখ রয়েছে।
পুরাণ অনুসারে, ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেছিলেন বলে একে অকালবোধনও বলা হয়। তবে বসন্তকালে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা করা হয়, তাতে বোধনের প্রয়োজন হয় না।
পূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, সার্বিকভাবে দেশের সব জায়গাতেই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে পূজা হবে। গতবারের চেয়ে এবারে বাড়তি ৩৮৩টি মণ্ডপ পূজায় অংশ নিচ্ছে। দেশের দুই-একটি স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসন এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলে জানান এ নেতা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, সবখানেই বইছে উৎসবের আমেজ। দশভূজা দুর্গাকে স্বাগত জানাতে চলছে সাজসাজ রব।
ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন কুমারপড়া থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে পৌঁছে গেছে দেবী দূর্গার প্রতিমা। এখন পর্যন্ত পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখা হয়েছে মা দুর্গার মুখ। ষষ্ঠীর সকালে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার পর ভক্তদের জন্য তা উন্মোচিত করা হবে। এরপরই পুরোহিতের চণ্ডীপাঠ, ঢাকের বাদ্য আর ভক্তদের উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে মণ্ডপ।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজ পূজামণ্ডপের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন।
অন্যদিকে এ দিন পূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন পূজা মণ্ডপ কমিটির নেতারা।
রাজধানীতে পূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যেই শারদীয় দুর্গাপূজা জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ প্রতিপাদ্যেই সকল ধর্ম ও মতের মানুষ পূজায় যোগ দেবেন বলে আশা করি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
এ নেতা জানান, গত বছরের মণ্ডপগুলোর মধ্যে রাজধানীর ছয়টিতে এবার পূজা হবে না। তবে আনন্দের সংবাদ, আরও নয়টি নতুন মণ্ডপ যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারে ২৩৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা মহানগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে পুরান ঢাকার তাঁতি বাজার ও শাঁখারী বাজারে। এসব মণ্ডপের প্রতিমা দর্শনে কেবল পুরান ঢাকার নয়, নতুন ঢাকা ও আশেপাশের সব এলাকা থেকেই দল বেঁধে মানুষজন ছুটে আসে।
এ এলাকায় প্রবেশ করলে অন্তত গোটা ত্রিশেক প্রতিমা দেখতে পাওয়া যাবে। একটি প্যান্ডেল শেষ হতে না হতেই চোখে পড়বে আরেক প্যান্ডেল। শুধু শাখাঁরী বাজার ও তাঁতী বাজার নয় আশপাশের লক্ষী বাজার, ফরাশগঞ্জ, আরমানিটোলা, গেণ্ডারিয়াসহ সব এলাকাতেই এখন চলছে পূজার আমেজ।
একই অবস্থা রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বনানী মাঠ, ধানমণ্ডির কলাবাগান মাঠসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে।
শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয়, এরই মাঝে পূজার আমেজ পেতে শুরু করেছেন সব মত ও পথের মানুষ। কল্যাণী মা দুর্গার আশীর্বাদে সব বিপর্যয় কেটে গিয়ে জগত আপন সুরে জেগে উঠবে, মানুষের মাঝে নেমে আসবে শান্তি, কায়মনে সবার এখন এটিই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
ডিএন/এইচজে