রোববার (০৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে সম্রাটের বাসায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের তিনি এ দাবি করেন।
‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে শনিবার (০৫ অক্টোবর) দিনগত রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আটক করে র্যাব।
এরপর সম্রাটকে নিয়েই রাজধানীর কাকরাইলে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলে সম্রাটের শান্তিনগর ও মহাখালীর বাসাতেও। বিকেলে অভিযানের সময় সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিলেন না।
পড়ুন>>অবৈধ টাকার বিষয়ে কিছুই জানতাম না, সম্রাটের স্ত্রী
শারমিন চৌধুরী বলেন, ১৯ বছর আগে তাদের বিয়ে হলেও দুই বছর ধরে তারা আলাদা জীবন-যাপন করেন। তাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সে বিদেশে থাকেন৷
স্বামী সম্রাট রোববার সকালে আটক হয়েছেন-এ খবর জানেন বলেও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
শারমিনের দাবি, সম্রাট ক্যাসিনো চালাতো সেটা আমি জানতাম না। আমি জানতাম সে যুবলীগের একজন ভালো নেতা। সেটা উত্তর ও দক্ষিণের সবাই জানেন। ও যে এত বড় একটা ক্যাসিনো চালাতো, সেটা আমি জানতাম না।
সম্রাটের সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না জানিয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন, ক্যাসিনো চালিয়ে যা আয় করে তা দলের জন্য খরচ করে। আর বাকি কিছু থাকলে তা সিঙ্গাপুরে ও দেশে জুয়া খেলে।
ক্যাসিনো চালিয়ে দল চালানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘বোঝা যায়, এমন জনপ্রিয়তা আর কোনো নেতার আছে বলেন? উত্তরেও তো নিখিল নামের একজন আছেন, তার তো এত জনপ্রিয়তা নাই। ’
ক্যাসিনো চালাতে আপনি নিষেধ করতেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সম্রাটের মিলতো কম। ও ছেলে পেলে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতো। ’
সম্রাটের উত্থানের বিষয়ে শারমিন বলেন, ও শুরু থেকেই সম্রাট। আরও যেসব নেতাকর্মী আছেন তাদের চেয়ে সম্রাটের চলাফেরা অনেক ভালো।
ক্যাসিনোতে কিভাবে গেলেন- সেটা না জানলেও ‘সম্রাটের নেশা ছিল জুয়া খেলা’ যোগ করেন শারমিন চৌধুরী।
চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন, এই অভিযান চালানোর উদ্যোগ আরও আগে নিলে ভালো হতো৷
সম্রাট ঘন ঘন সিঙ্গাপুর কেন যেতেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুয়া খেলা তার নেশা, সম্পত্তি করা (দোকান, গাড়ি, বাড়ি) তার নেশা না৷
সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তার ছবি দেখা গেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সম্রাটের স্ত্রীর দাবি, দুই বছর ধরে আমাকে সিঙ্গাপুর নেয় না। আমি যতটুকু জানি চায়না এবং মালয়েশিয়া মিক্সড এক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়েছে। সিঙ্গাপুর গেলে তার সঙ্গে সময় কাটাতো সে।
তিনি বলেন, ক্যাসিনো তো শুরু হয়েছে তিন-চার বছর। তার আগে দল চালাতো ঠিকাদারি করে। আর দলে ওর বড় ভাই আছেন, সেও দিতো।
দলের বড়ভাই কে- জানতে চাইলে শারমিন চৌধুরী বলেন, তার সম্পর্কে আমি জানি না তবে ও সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতো। সবাই ওকে পছন্দ করতো।
ক্যাসিনোর ঘটনায় অনেকেই আটক হয়েছেন, আপনি তাদের চেনেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি শুধু খালেককে চিনতাম, অন্য কাউকে নয়।
‘আমি রাজনীতিতে আসি এটা সম্রাট কখনই চায়নি। শুরু থেকেই চেয়েছে আমি হাউজওয়াইফ থাকি। আমিও ঘরে থাকা পছন্দ করি, নামাজ পড়া পছন্দ করি। আমি সেটাই করতাম। ’
তিনি বলেন, ‘সম্রাট জুয়া খেলে এটা পড়ে জেনেছি। আর জুয়া খেলার এত বড় বড় জায়গা আছে, আমার মাথায়ও ছিলো না।
আপনাদের বিয়ের সময় কেমন সম্পদ ছিল আর এখন কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে সম্রাটের স্ত্রী বলেন, ওর বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট করার কোনো নেশা ছিলো না৷ ওর নেশা একটাই জুয়া খেলা।
ফ্ল্যাট কয়টি আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে শারমিন চৌধুরী বলেন, আমি এটাতে থাকি, শান্তিনগর আর মহাখালীর ৩১ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাট আছে।
কাকরাইলের সম্রাটের অফিসটা নাকি দখল করা? এমন প্রশ্নের জবাবে সম্রাটের স্ত্রী বলেন, ওটা ওর কেনা নিজস্ব অফিস। ওর অফিসে যাওয়ার সময় চেক করার কারণে উপরের ফ্লোরগুলো সবই আস্তে আস্তে খালি হয়ে গেছে।
সম্রাট এখানে আসতো কি না- জানতে চাইলে শারমিন চৌধুরী বলেন, ও ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সমস্যা হতো। তাই আসতো না। বিচ্ছেদ হয়নি, মাসে দুই তিনবার আমি যাই দেখা করি, কথা হয়।
‘পলাতক থাকার পর থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওর ভয় ছিল আমি বলে দেবো। ’
এর আগে শনিবার গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে সম্রাটকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে আটক হন যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমান। পরে তাদের দু’জনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে আলোচনায় ছিলেন যুবলীগ নেতা সম্রাট।
অভিযোগ রযেছে, সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আরমানও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনোর কারবারে জড়িত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৯
এজেডএস/এসই/এমএ