ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, বড়াইগ্রামে ২ হাসপাতাল সিলগালা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৯
ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, বড়াইগ্রামে ২ হাসপাতাল সিলগালা সিলগালা করা বনপাড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রামে পৃথক দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল  দু’টি সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে, একটি হাসপাতালের পরিচালকসহ পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার বনপাড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল ও সন্ধ্যায় রাজাপুর বাজারের সৌরভ হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার পারভেজ।  

মৃতরা হলেন বড়াইগ্রাম উপজেলার তালশো গ্রামের রাহাবুল ইসলামের মেয়ে বড়াইগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন (১৫) ও ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি গ্রামের নীলা খাতুন (২২)।

বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. নজমুল হক সুমাইয়ার পরিবারের বরাতে বাংলানিউজকে জানান, শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে পেটব্যাথার কারণে সুমাইয়াকে বনপাড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে, রোগীকে বেডে দিলে তার বুকে ব্যথা শুরু হয়। রোববার (৬ অক্টোবর) ভোররাতে এক নার্স ব্যথানাশক ইনজেকশন দিলে ঘুমিয়ে পড়েন সুমাইয়া। সকাল আটটার দিকে ডা. সামিয়া তাবাচ্ছুম আক্তার সাথী ও নার্স আরিফা খাতুন এসে রোগীর প্রেশার মেপেই চলে যান। তারা রোগী মৃত্যুর কথা না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে গা ঢাকা দেন।  

পরে, রোগীর স্বজনেরা সকাল ১০টার দিকে জানতে পারেন সুমাইয়া মারা গেছেন। এতে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।  
খবর পেয়ে ইউএনও আনোয়ার পারভেজ, বড়াইগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. খালেদ মাহমুদ সিদ্দিকী পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করে জানতে পারেন ডা. সাথী সার্জন না হয়েও অস্ত্রোপচার করেছেন। হাসপাতালে দক্ষ সার্জন ও অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া অস্ত্রোপচার করায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।  

ইউএনও আনোয়ার পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব ছিল। এ কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, তিনটি কেবিন ও ১৪টি বেড বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাব, যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল নেই। হাসপাতালটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন ছিল। পরে আর নবায়ন করা হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় হাসপাতালটি বন্ধ করে সিলগালা করা হয়েছে।  

অপরদিকে, রাজপুর সৌরভ হাসপাতাল নামে আরেকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে অ্যাপেনডিসাইটিসের রোগী নীলা ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার অভিযোগে তার স্বজনেরা হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল, জানালার কাচ ভাংচুর করেন। পরে, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্লিনিকেরও কাগজপত্র পরীক্ষা করে ত্রুটি পাওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় মৃত সুমাইয়ার মা মোমেনা বেগম বাদী হয়ে হাসপাতালের পরিচালক সুজন মাহমুদসহ পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে, রাজাপুরের ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। মরদেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।