বুধবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৯তম অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পিত গ্রামীণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকায় গ্রামীণ জনগােষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযােগ-সুবিধা সম্বলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবনবিশিষ্ট ‘পল্লী জনপদ নির্মাণ’র পূর্ত কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমােদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
প্রকল্পের বিস্তারিত জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রামের সবাইকে সংশ্লিষ্ট গ্রামের এক পাশে নিয়ে আসবো। আমাদের খরচে বাড়ি-ঘর করে দেবো। তারা খুবই কম সুদে কিস্তিতে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করে দেবে। এতে করে পুরা গ্রামের কৃষি জমি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। আর গ্রামবাসীকে একসঙ্গে নিয়ে এলে তারা এখন যে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে তা এক স্থানে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া আমরা গ্রামে যে অবকাঠামো তৈরি করি, তা আর করা লাগবে না। আমরা আমাদের সার্ভিস ডেলেভারি অনেক কম খরচে করতে পারবো। এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ও বিশ্বাসের একটি প্রকল্প। দেরিতে হলেও শুরু করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এই প্রকল্প সাতটি স্থানে করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি স্থানে কাজ শুরু করেছি। আর বাকিগুলোর কাজ এগুলো হয়ে যাওয়ার পর ফলাফল দেখে করবো। এতে করে কেউ ঠকবে না। গ্রামের প্রতিটা মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা শহরে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকে, যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে শুরু করে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, বড়দের গল্প করার ব্যবস্থা এবং গরু ছাগল পালনেরও ব্যবস্থা থাকবে।
‘গ্রামীণ অবকাঠামো ঠিক রেখে শহরের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়াই হলো এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের তিনটি ইউনিটের মধ্যে রংপুরে ৮০ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৮০ শতাংশ এবং বগুড়ায় ৩০-৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামে ৪-৫ তলা ভবন হবে। এতে তিন থেকে চার রকমের রুম হবে। এটা একটি নতুন উদ্যোগ, ভালো প্রকল্প। এতে আমাদের অনেক কৃষি জমি বেঁচে যাবে। তবে যার যতটুকু জমি আছে, তার ততটুকু জমিই থাকবে। যে যেভাবে মালিক আছেন সেভাবেই থাকবেন। ’
এ প্রকল্পের খরচ কে দেবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার নির্মাণ করে দেবে। তবে স্বল্প সুদে কিস্তি ভিত্তিতে গ্রামবাসী তা পরিশোধ করে দেবে। এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে করা হচ্ছে। এটা করা হলে পুরা গ্রামের জমি ব্যবহার করা যাবে। এটা পরিচালনার দায়িত্ব এলজিআরডি মন্ত্রণালয় পরে ঠিক করে দেবে। তবে বাস্তবায়ন করছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।
গ্রামের মানুষ আসবে কি-না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। তারা এখানে আসবে বলেই আমরা এটা করছি। এতে তাদের ক্ষতি কোথায়? কোনো ক্ষতি তো নেই, বরং সরকারকে সাহায্য করা হলো।
গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজন কি এ প্রকল্পের আওতায় আসবেন- জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, তারা আসবে কি-না এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, তবে আমার মনে হয় গ্রামের স্বার্থে তারাও আসবেন। একটা ভালো উদ্যোগে তারা আসবেন না কেন। বিদেশে আছে, আমরাও চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে পারলে আমরা কেন পারবো না?
প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১৪ সালের আগস্টের ১৯ তারিখ একনেক কর্তৃক অনুমােদিত হয়। সাতটি সাইটের মধ্যে চলমান ৩টি সাইটের (রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা) নির্মাণকাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের জুনের ১৯ তারিখের সিসিইএ’র সভায় ভূতাপেক্ষ অনুমােদন প্রস্তাব সম্পর্কিত বিষয়ে কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত সম্বলিত সারসংক্ষেপ বিবেচনাকালে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন প্রদান করেন। পল্লী জনপদের কয়টি কাজ শেষ হয়েছে এবং এর সফলতা কতটুকু তা বিশ্লেষণ করতে হবে। যে কাজ শেষ হয়ে গেছে সেগুলো সম্পন্ন করার পর বাকিগুলো করা সমীচীন কি-না তা যাচাই করে দেখে নতুন কাজ শুরু করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
জিসিজি/এইচএ/