বলছিলাম নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। এর পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে একটি বাড়ির আঙিনায়।
জানা যায়, নাগরপুরের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে ধলেশ্বরী নদী প্রথমবারের মতো বিদ্যালয়ের ভবন গিলে খায়। ২০১৭ সালের বন্যায় দ্বিতীয় দফায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বিদ্যালয়ের ভবন। এরপর থেকেই একটি বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ওই বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন চার শিক্ষক।
একই স্থানে চলে তিন শ্রেণির পাঠদান। ফলে, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কেউই ভালোভাবে কারও কথা শুনতে পারে না। আর একটু বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীদের ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের এমন দুরাবস্থার খবর পেয়ে কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন ছেড়ে দিয়েছেন ২৫শতাংশ জায়গাও। কিন্তু ওই টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করার কাজ হলেও শিক্ষার্থীদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ওই বিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কয়েক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুর রহিম, সুরুজ মিয়া, সফদের আলী। তাদের সঙ্গে কথা হয় বিদ্যালয়ের বিষয় নিয়ে। তারা বাংলানিউজকে জানান, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা খোলা আকাশের নিচে অন্যের বাড়ির আঙিনায় পড়ালেখা করছে- এটা খুবই কষ্টের। স্কুলের কোনো ঘর নেই। বসার জায়গা নেই। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। দ্রুত একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা দরকার।
বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ভালো স্কুলে ভর্তি হবো। এই স্কুলে খোলা আকাশের নিচে পড়তে ভালো লাগে না। ভালো স্কুলে ভর্তি হলে দূরে যেতে হবে। এ স্কুলটি বাড়ির কাছে, তাই এখানে পড়ছি। ’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পরই বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। তবে ২০১৭ সালে ভাঙনের পর বিদ্যালয়টি আর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে দিন দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজম আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ বেটুয়াজানী জামে মসজিদে চূড়ান্ত মড়েল টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের আগেই এ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ না করা হলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে যাবে। ’
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের একটি টিনের ঘর তৈরির জন্য কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। স্থানীয় কিছু লোক ২৫ শতাংশ জায়গাও দিয়েছে। ওই জায়গায় মাটি ভরাট করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের জন্য একটি অস্থায়ী টিনের ঘর নির্মাণ করা হবে। নতুন বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার জন্য নতুন ঘর পাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এইচএডি/