ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজাকারের ছেলে নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
রাজাকারের ছেলে নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা!

সিরাজগঞ্জ: ৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধীদের প্লাটফর্ম শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বাবা জয়নাল আবেদীন, আজ তারই ছেলে বজলুর রশিদ নিচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। রয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদেও। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও এতোদিন মুক্তিযোদ্ধার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের অধ্যক্ষ বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এসব অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্য চলছে নানা সমালোচনা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীনতা বিরোধীরা জালালপুর ইউনিয়নে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির ১১ নম্বর সদস্য জয়নাল আবেদিন প্রত্যক্ষভাবে পাকবাহিনীকে সহায়তা করেন। তার ছেলে বজলুর রশিদ তখন নবম শ্রেণির ছাত্র। তিনি তার বাবার কাজেই সহযোগিতা করেছেন। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সেই বজলুর রশিদই হয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা। ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান তালিকা মুক্তিবার্তা (লাল বই) ও তার নাম নেই, নেই প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত সনদও। তারপরও ২০০৪ সালে প্রকাশিত গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন তিনি। মন্ত্রণালয়ের সনদ নম্বর-ম ৭৬২৩, স্মারক নম্বর-১৫৫, তারিখ-২৭/১১/২০০২। ভাতা বই নম্বর-৩২৮।

সেই থেকে পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। ইতোমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার মেয়েকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। নিজেও বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিভিন্ন সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দু’দফায় জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসলেও কৌশলে সেসব মোকাবেলা করেছেন তিনি।  

এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও প্রবীণরা বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বজলুর রশিদ নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। এলাকার কেউই তাকে মুক্তিযুদ্ধ করতে দেখেনি। তবে তার বাবা শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য থাকার বিষয়টি সবাই স্বীকার করেন।  

মালিপাড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা গাজী রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বজলুর রশিদকে মুক্তিযুদ্ধ করতে দেখিনি। তিনি কোন সেক্টরে বা কাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কিছুদিন আগে অসদুপায়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বজলুর রশিদ তাদের মধ্যেই একজন।  

বৃদ্ধ মজিবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বজলুর রশিদ আমাদের পাশের বাড়ির মানুষ। আমরা এটাই জানি যে, তিনি ও তার পরিবারের কোনো সদস্যই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তবে তার বাবা জয়নাল আবেদীন ছিলেন পিস কমিটির মেম্বর।  

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শাহজাদপুর উপজেলা ইউনিট কমান্ডার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বিনয় কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, আমার জানা মতে বজলুর রশিদ কখনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তবুও তিনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তারা বাবা মুসলিম লীগের সদস্য ছিলেন।  

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার খালেকুজ্জামানের বাংলানিউজকে দাবীন, বজলুর রশিদের বাবা জয়নাল আবেদিন শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে তিনি এলাকায় কোনো ক্ষতি করেননি।  

এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বাংলানিউজকে জানান, বজলুর রশিদ ভারত থেকে ট্রেনিং করেননি। যেভাবেই হোক তার নাম মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে উঠেছে। ভাতাও পাচ্ছেন। এরকম মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই আছে। বাতিল হলে সবার নামই বাতিল হওয়া উচিত।  

মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কি না এমন বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বজলুল রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব বিষয় সামনে নিয়ে আসছে। এরআগেও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।