ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

শিশিরস্নাত হেমন্তেই লেপ-তোষক তৈরির ধুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৯
শিশিরস্নাত হেমন্তেই লেপ-তোষক তৈরির ধুম

রাজশাহী: চতুর্থ ঋতু ‘হেমন্ত’। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ দুই মাস ঋতুটির ব্যাপ্তি। শরতের শুভ্র মেঘের ভেলা, কাশফুল ও স্নিগ্ধ নরম হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হিম কুয়াশার চাদর নিয়ে আসে হেমন্ত।

গাছের নরম-কচি সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি রোদ আর সুনীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। শেষ রাতে ভর করে শীতলতা।

ভোরের আলো ছড়ানোর পর শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু হিম বাতাস জানান দেয় ঋতু পরিবর্তনের এ খবর। তাই নতুন আবহ তৈরি হয় সময়টাতে। আর বাংলার প্রকৃতিজুড়েই যখন পালাবদলের এমন ঘনঘটা, তখন মানবকুলে শীতের প্রস্তুতি তো নিতেই হয়।

কালের চাকায় ভর করে আসা হেমন্তের এই শিশিরস্নাত প্রহরে তাই এখন শীতের আমেজ উপভোগ করতে শুরু করেছে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে শীতকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি। পাশাপাশি এবার শীত কেমন পড়বে, তা নিয়েও শুরু হয়ে গেছে নানান জল্পনা-কল্পনা।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাই ঋতু পরিক্রমায় শীত আসতে এখনও এক মাস বাকি থাকলেও রাজশাহীতে এখনই পাওয়া যাচ্ছে এর আমেজ। তোষক বানাচ্ছেন এক কারিগর, ছবি: বাংলানিউজবাড়ির লোকজন এতদিন বাক্স বন্দি করে রাখা লেপ-তোষক বের করছে ঠিক করার জন্য। আবার কেউ তৈরি করছেন নতুনভাবে। আর মানুষের শরীরের কাপড়ে পরিবর্তন আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর ধুনকররাও। সকাল থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে লেপ-তোষক তৈরি করেছেন তারা।

কেউ রিকশা-ভ্যানে, কেউ সাইকেলে, আবার কেউ বা পায়ে হেঁটে ঘুরছেন অলিগলিতে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি বাড়িতে লেপ বা তোষক তৈরি করতে পারলেও অর্ডার নিচ্ছেন পরের দিনের। বিশেষ করে গত দুইদিন ধরে পাখি ডাকা ভোরে ঘুমের ঘরেই শোনা যাচ্ছে তাদের হাঁক-ডাক। তুলা, কাপড় ও ধুনার নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছেন ধুনকররা। বাড়ির ছাদ আর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে খোলা সড়কের মোহনায় ধুনারের টুং-টাং আওয়াজ ও বাতাসে উড়ে বেড়ানো তুলার অবরণ জানান দিচ্ছে শীত আসছে।

তুলাপট্টি নামে খ্যাত মহানগরীর গণকপাড়া এলাকায় লেপ-তোষক তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। শীত আসার আগেই দোকানগুলোতে এখন অতিরিক্ত কারিগর কাজ শুরু করছেন। পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি দোকানেও কাজ চলছে পুরোদমে। তৈরি করে চলেছেন লেপ-তোষক। এখনই যেন কাজ নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই। লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত কারিগররা, ছবি: বাংলানিউজ এই কয়েকদিন আগেও দোকানে কাজ ছিল না বলে জানান গণকপাড়া এলাকার ধুনকর জাবের হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এতদিন নবজাতক শিশুর জন্য বালিশ, কোলবালিশ আর সোফা সেটের জন্য নারকেলের ছোবা বিক্রি করে কোনো রকমে দোকানের খরচ চালাতে হচ্ছিল। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে তোষক মেরামতের কাজ আসতো। কিন্তু অক্টোবরের শেষ দিকের টানা বৃষ্টিপাতের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।

মনে হয়েছিল শীত বোধহয় পড়েই গেছে। যদিও রোদ ওঠার পর গরম পড়তে শুরু করে। এরপরও ওই সময় থেকেই লেপ-তোষকের অর্ডার বাড়তে থাকে। কার্তিকের মাঝামাঝিতে ভোরের দিকে হালকা শীতের আমেজ থাকায় দাম বাড়ার ভয়ে অনেকেই আগেভাগেই এখন শীতের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছেন। আজও দোকানে আসার পর আটটি লেপ ও ছয়টি তোষকের অর্ডার মিলেছে বলে জানালেন জাবের হোসেন।

লেপ, তোষক ও লেপের কভারসহ অন্য জিনিসপত্রে দাম কেমন প্রশ্নে একই এলাকার অপর ধুনকর মনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশিই। ডাবল লেপ এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিঙ্গেল লেপ ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই রয়েছে। এছাড়া ভালো মানের শিমুল তুলা দিয়ে নুতনভাবে একটি সিঙ্গেল লেপ তৈরি করতে খরচ পড়ছে এক হাজার ২০০ টাকা, আর ডাবল লেপ তৈরিতে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। সিঙ্গেল তোষক তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ এবং ডাবল এক হাজার ৭৫০ টাকায়।

সাধারণত কার্তিকের শেষে লেপ-তোষক তৈরির ধুম পড়ে যায়। এবার একটু আগেই শুরু হয়েছে। পৌষে পড়লে এই ব্যস্ততা আরও বেড়ে যাবে। তখন রাত-দিন সমানতালে কাজ করতে হবে। এখন নতুন লেপ তৈরির পাশাপাশি পুরানো লেপ ভেঙে নতুনভাবে তৈরির অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য শিমুল তুলার চেয়ে গার্মেন্টসের জুট থেকে আসা তুলা দিয়ে তৈরি লেপই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মনু মিয়া।

একটি লেপ তৈরিতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় লাগে জানিয়ে কারিগর জহিরুল বাংলানিউজকে বলেন, একজন কারিগর দিনে গড়ে পাঁচটি লেপ তৈরি করতে পারেন। এছাড়া দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি তোষক তৈরি করতেও প্রায় একই সময় লাগে। তুলা ধুনা, মাপমতো কাপড় কেটে সেলাই করা, তুলা ভরে তা দিয়ে লেপ-তোষক তৈরি করা- সব কাজ হয় একই দোকানে। কোনোকিছুর জন্য আলাদা আলাদা দোকানে দৌঁড়াতে হয় না ক্রেতাদের। তবে সবকিছুর দাম বাড়ায় এ বছর খরচ গড়ে এক থেকে ২০০ টাকা বেশি পড়ছে। পৌষের পর এই দাম আরও কিছুটা বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন কারিগর জহিরুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এসএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।