ঢাকা, বুধবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হলি আর্টিজানে হামলার পর বদলে গেছে গুলশানের নিরাপত্তা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
হলি আর্টিজানে হামলার পর বদলে গেছে গুলশানের নিরাপত্তা

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান এলাকার হোটেলে সরাসরি কেউ প্রবেশ করতে পারে না। তল্লাশি আর নজরদারির পর এসব হোটেলে প্রবেশ করতে হয়। হলি আর্টিজানে হামলার পরে বদলে গেছে গুলশানে নিরাপত্তা। এমনটাই বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ভয়াবহ ঘটনার পরেই এ এলাকায় গণপরিবহন এখনও নিষিদ্ধ। আগে যেসব বাস চলতো, এখন তার বদলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘ঢাকা চাকা’ ও ‘গুলশান চাকা’ নামানো হয়েছে।

এ বাসে ভাড়া নির্ধারিত। বাসের জানালা খোলা যায় না। টিকিট করেই উঠতে হয়। আর অন্য কোনো এলাকার রিকশা গুলশানে চলতে পারে না। সাধারণ রিকশা সরাসরি চলাচল করতে পারে না। বিশেষ নম্বর প্লেট ও অনুমতি দেওয়া রিকশা চলাচল করতে পারে।

হলি আর্টিজান ঘটনার তিন বছরের মধ্যে নিয়মেই চলছে সব। পুলিশ সবগুলো হোটেল-রেস্টুরেন্ট কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী, হোটেলগুলোর প্রবেশ পথে থাকতে হবে আর্চওয়ে (নিরাপত্তামূলক তোরণ), তারও আগে একটি আলাদা ‘প্রতিবন্ধক গেট’ এবং বিমানবন্দরের মতো ‘লাগেজ স্ক্যানার’ থাকতে হবে। রেস্টুরেন্টগুলোতে লাগেজ স্ক্যানার না রাখলেও থাকতে হবে প্রথম দু’টি নিরাপত্তা স্তর।

গুলশান ঘুরে দেখা যায়, হেঁটে বা গাড়িতে যেভাবেই হোক, এখন কেউ এসব এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তা তল্লাশি শেষ করেই ঢুকতে হচ্ছে। নিরাপত্তা তল্লাশির আগে স্বাভাবিক আরেকটি ‘প্রতিবন্ধক গেট’ থাকছে। কেউ চাইলে হঠাৎ করে প্রবেশ করতে পারেন না।  

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রায়ের আগের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহজনক গাড়ি ও ব্যক্তিকে তল্লাশি করতেও দেখা যায়। কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে খ্যাত গুলশান ও বারিধারা এবং অভিজাত এলাকায় বিদেশি বসবাসকারী আছে এমন উত্তরা, ধানমন্ডি ও ডিওএইচএস এলাকাতেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তাকে তল্লাশি করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীজুড়ে রায়কে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুলশানে হামলার পরে আমরা অনেকগুলো চেকপোস্ট বৃদ্ধি করেছি। স্টাডিজিকাল পয়েন্টে চেকপোস্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক হাজারেরও বেশি স্থানে হাইরেজুলেশন সমৃদ্ধ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোনো কোনো রাস্তা ওয়ানওয়ে করা হয়েছে। গুলশান এলাকায় আমাদের সোর্স বৃদ্ধি করেছি।

তিনি আরও বলেন, গুলশান এলাকায় গণপরিবহনের প্রবেশ এখনো বন্ধ আছে। এখানে দু’টি বাস চলে 'ঢাকার চাকা' ও 'গুলশান চাকা'। এ এলাকায় নিবন্ধিত এক হাজার রিকশার অনুমতি দেওয়া আছে। হলি আর্টিজানের রায়ের কথা চিন্তা করে রাজধানী বিশেষ পয়েন্টে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। হুমকির কিছু নেই। তবু নিরাপত্তার স্বার্থে হোটেল-রেস্টুরেন্টে আর্চওয়ে, প্রতিবন্ধক গেট ও লাগেজ চেকিং ডিভাইস বসানো আছে। এখন এসব হোটেলগুলো নিয়ম মেনেই চলছে।

এ হামলা মামলার রায় ঘিরে নাশকতার কোনো তথ্য নেই বলে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারী জঙ্গিরা। ওই রাতেই তারা দেশি-বিদেশি মোট ২০ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে জাপান, আর্জেন্টিনা, ইতালি ও ভারতের নাগরিক ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯ 
এমএমআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।