ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বেপরোয়া জাবালে নূর যেভাবে কেড়ে নিলো রাজীব-দিয়ার প্রাণ

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
বেপরোয়া জাবালে নূর যেভাবে কেড়ে নিলো রাজীব-দিয়ার প্রাণ

ঢাকা: ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুর ১২টা। রাজধানীর কুর্মিটোলার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খাতুন মিম অন্য শিক্ষার্থীদের মতো বাসায় ফেরার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কে জানতো, সেটাই হবে তাদের জীবনের শেষ অপেক্ষা! হঠাৎ করেই বেপরোয়া জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস এসে নিমিষেই চিরদিনের জন্য শেষ করে দিলো তাদের বাসায় ফেরার অপেক্ষা!

সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই পরিবহনের চালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার রায় হচ্ছে রোববার (১ ডিসেম্বর)। ঢাকার একটি আদালত বিচারিক কার্যক্রম শেষে রোববার দুপুরে রায় ঘোষণা করবেন।

 

প্রায় দেড় বছরের মাথায় আলোচিত এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে। সেই রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা।

কী ঘটেছিল সেদিন: ২৯ জুলাই রোববার দুপুর ১২টায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একদল শিক্ষার্থী গণপরিবহনের জন্য বিমানবন্দর সড়কে কলেজের বিপরীত পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় আবদুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের দু’টি বাস প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তুলতে কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর একটি বাস তুলে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই বদলে যায় সেখানকার দৃশ্যপট! রক্তাক্ত শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করতে থাকেন। এ খবর দ্রুত পৌঁছে পড়ে কলেজে। কলেজ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেই প্রাণ হারান কলেজের দু’শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া। সেই ঘটনায় আরও ১২ জন আহত হলেও তারা প্রাণে বেচেঁ যান। দু’জনের মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

শিক্ষার্থীরা তাদের দু’সহপাঠীকে হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। ঘটনার পর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দু’টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ । পুলিশের চেষ্টায় কয়েক ঘণ্টা পর বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার পরদিনও কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। সেই ঘটনার পরে তৎকালীন নৌমন্ত্রী ও পরিবহন মালিক নেতা শাজাহান খানের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন, নৌমন্ত্রীর প্রশ্রয় ও মদদেই চালকরা এ ধরনের সাহস পাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেছিলেন, আমি যদি না থাকি, আপনারা কী মনে করেন...।

এরপর তিনি বলেন, আমি যদি আপনাদের প্রশ্ন করি, গতকাল আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে ৩৩ জন মারা গেলো।

আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, সেখানে (ভারতে) কী এভাবে কথা বলে? এরপরও একজন সাংবাদিক সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে শাজাহান খান বলেন, আপনি কী জানেন যে, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন মারা যায়? ১৬ জন মারা যায়, আপনাদের রিপোর্ট থেকেই জানলাম। তিনি বলেন, পোর্ট নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে করেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

শাজাহান খানের ব্যঙ্গাত্মক হাসি ও এমন মন্তব্যের পর সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অহিংস আন্দোলনে রুপ নেয়। পরে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ক্ষমা চেয়ে পার পান শাজাহান খান।

একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী দিয়া। তার রোল নম্বর ছিল ২৮৫৫। দিয়া মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনিও একজন গণপরিবহনচালক ছিলেন। অন্যদিকে দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। তার রোল নম্বর ছিল ১৮৮২। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাজু খালাতো ভাইয়ের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন। বাবা ছিলেন শ্রমিক। তিনিও মারা যান বেশ কয়েক বছর আগে। সেই বাসচাপায় চিরতরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যান দু’মেধাবী শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
টিএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।