ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আসবে দুর্যোগ, থাকবো সজাগ!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আসবে দুর্যোগ, থাকবো সজাগ! ছবি: বাংলানিউজ

পাথরঘাটা (বরগুনা): তাহিরা খানমের (ছদ্ম নাম) সাথে বিয়ে হয় রবিউলের (ছদ্মনাম)। দরিদ্র পরিবার হলেও খুব ঘটা করে বিয়ের আয়োজন চলছিল। কয়েক ঘণ্টা আগ থেকেই দুর্যোগের খবর সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা এলাকায় প্রচার করছিল। তার আগেই তাদের বিয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বরের বাড়িতে যাওয়ার পথেই শুরু হয়ে যায় ঝড়। পথিমধ্যে নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তাহিরা-রবিউল নব দম্পতির স্বপ্ন।

নতুন স্ত্রীকে হারিয়ে রবিউল নির্বাক!

এদিকে নিমিষেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাড়ি-ঘর, গাছপালা, গরু-ছাগল। অনেক প্রাণহানি ঘটে। কারো মরদেহ পড়ে আছে পুকুরের মধ্যে, গাছের মাথায়। কৃষকের লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতে, মৎস্য শ্রমিকদের লাশ পড়ে আছে পুকুরের মধ্যে। সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় গ্রামের অনেক দরিদ্র পরিবারের ঘর ভেঙে যাওয়ায় পাশেই চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তার পাশেই পড়ে আছে লাল শাড়ি পরা নতুন বউয়ের  লাশ। অনেকই কাঁদছেন একমাত্র সম্বল হারিয়ে, আবার অনেকই কাঁদছেন একমাত্র সন্তানের লাশ পাশে নিয়ে। বন্যা শেষেই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়ে যায়। ছুটে আসেন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংবাদকর্মী, ফায়ারসার্ভিসসহ স্বেচ্ছাসেবক দল।  

ছবি: বাংলানিউজহ্যাঁ, এটি কোনো বাস্তব দুর্যোগের খবর নয়; তবে দুর্যোগের সময় যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চলে ঠিক সেভাবেই মহড়ার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল, প্রান্তিক জনপদ। যেখানে পানি আর বাতাস তথা দুর্যোগের সঙ্গেই এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বসবাস। দুর্যোগ যেন প্রতিনিয়ত তাদের অতিথি হয়ে আসে। এ অঞ্চলের মানুষের সব শেষ করে দেয় ভয়ঙ্কর সিডরের মতো অসংখ্য ঝড়, জলোচ্ছ্বাস।

সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদী। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। উপকূলবর্তী পাথরঘাটা উপজেলায় নামে-বেনামে আসে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাথরঘাটা উপজেলাসহ দক্ষিণ উপকূলজুড়ে। সর্বশান্ত হয়ে পড়ে দরিদ্র-অতিদরিদ্রসহ অসংখ্য মানুষ। ক্ষতি হয় রাস্তাঘাট, গাছপালাসহ অসংখ্য সম্পদের। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় দুর্যোগে প্রাণহানি ঘটে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক সম্পদ।  

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে উপকূলীয় অঞ্চলের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় অনেক প্রাণহানি ঘটেছিল। সিডর পরবর্তী সরকারি-বেসরকারিভাবে দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতামূলক অসংখ্য প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল পরবর্তী দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্প বিষয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকতর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্যোগ বিষয়ে সচেতনতামূলক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) হাড়িটানা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ‘কোডেক’ এবং অক্সফামের আর্থিক সহযোগিতায়, এলনা প্রজেক্টের আওতায় সংকল্প ট্রাস্টের বাস্তবায়নে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ও সিপিপিসহ শিক্ষার্থীরা এ মহড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মল্লিক শুভ, সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা অরবিন্দ দাস, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাসমিমা, পাথরঘাটা থানা ওসি (তদন্ত) মো. সাইদ আহম্মেদ, সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংকল্প ট্রাস্টের পরিচালক আবদুর রহিম।  

ছবি: বাংলানিউজএ মহড়া দেখতে আসেন অনেকেই। দুর্যোগের মহড়া দেখতে আসা জাকির হোসেন মুন্সি, জাহিদ তালুকদারের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এ অঞ্চল একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। সব সময়ই এখানে দুর্যোগ লেগেই থাকে। সচেতনতা না থাকায় অনেক প্রাণহানি হয়। তবে আজকের যে মহড়া দেখলাম তাতে আমরা অনেক সচেতন হয়েছি। এ অভিজ্ঞতা দুর্যোগের সময় কাজে লাগবে।

মহড়া দেখতে আসা নারী আমেনা বেগম ও ছকিনা বেগম বলেন, দুর্যোগের সময় আমরা দেখি কীভাবে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কীভাবে বাতাস শুরু হলে মানুষ ছুটাছুটি করে। ঠিক সেভাবেই আমরা দেখেছি এ মহড়ার মাধ্যমে কীভাবে বন্যা শুরু হলে মানুষ ছুটাছুটি করে। কিভাবে শাড়ি পরা এবং বোরকা পরা নারীদের বন্যায় প্রাণহানি হয়। আমরা এ মহড়া থেকে যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি তা দুর্যোগকালীন কাজে লাগাবো।  

পাথরঘাটা উপজেলা সিপিপির টিম লিডার অলিউল ইসলাম বাবুল বলেন, দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে আমাদের এ প্রচেষ্টা। এক সপ্তাহ ধরে মহড়ার জন্য অনুশীলন করানো হয়েছে। আমরা কিছুটা সফল। উৎসুক মানুষকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। এ মহড়ায় আমরা একটি গ্রামের চিত্র তুলে ধরেছিলাম।

সংকল্পের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, উপকূলীয় পাথরঘাটা উপজেলা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে প্রতিনিয়ত দুর্যোগ লেগেই থাকে। দুর্যোগের সময় কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ হয় সেটি আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি এবং কীভাবে একটি দুর্যোগ আসলে প্রাণহানি বা ক্ষতি থেকে বাঁচা যায় সেটিও দেখিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।