ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিমান সেনাদের সজাগ থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
বিমান সেনাদের সজাগ থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী 

যশোর: দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলাকে সৈনিক জীবনের পাথেয় হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নবীন সৈনিকদের দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘আজ থেকে আপনাদের ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে ‘৭৬তম বাফা কোর্স’ এবং ‘ডিই-২০১৮’ কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।  

এদিন ১০৪ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার জন্য বিমান বাহিনীর এই নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনারা শপথ গ্রহণ করেছেন। কাজেই এটা হবে আপনাদের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ও প্রথম ব্রত। নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকবেন এবং দেশের সেবা করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।

উন্নত চরিত্র ও মানসিক শক্তি একজন বিমান সৈনিককে আদর্শ সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিক রাখে-এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখবেন, অধস্তনদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। তাহলেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ’

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে ‘পাসিং আউট’ ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তব্যের কিছু অংশের উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা দায়িত্ব বোধ সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।  

জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালো বাইসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, সৎ পথে থেকো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা। ’

জাতির পিতার এ নির্দেশনা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালনের জন্যও নবীন কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধূকন্যা বলেন, ‘আমি আশা করবো, এ কথা আপনারা সবসময় স্মরণ রাখবেন। ’

‘মনে রাখবেন- সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, অকৃত্রিম দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার যে শপথ আজ আপনারা নিলেন- তার বাস্তবায়ন আপনারা সবসময় করে যাবেন। নবপ্রজন্মের উদীয়মান কর্মকর্তা হিসেবে আজকের বিমান বাহিনীকে আপনারা নিয়ে যাবেন সফলতার শিখরে- এই আমার প্রত্যাশা। ’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিধি ও সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে জাতির পিতা একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

‘জাতির পিতার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় সে সময়কার অত্যাধুনিক ‘মিগ-২১’ সুপারসনিক ফাইটার বিমানসহ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স রাডার। ’

সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিমান বাহিনীকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করি-যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ’ 

‘যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিং এর লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নিজস্ব জনবল, প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ব্যবহার করে ফাইটার বিমানের ওভারহলিং করতে সক্ষম। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাডেটদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বাড়ানো এবং ডিজিটাল ককপিট সংবলিত কমব্যাট প্রশিক্ষণ বিমান এবং পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানসহ হেলিকপ্টার সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে।

বিমান বাহিনী একাডেমির জন্য অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক বিমান বাহিনী গঠনে এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা রাখি। ’

কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের আজকের সাফল্যের পেছনে অভিভাবকদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বিশেষ দিনে আপনাদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনারা দোয়া করবেন যেন, আপনাদের সন্তানেরা জাতির সামনে দেশপ্রেম ও বীরত্বের আদর্শের উদাহরণ হয়ে ওঠতে পারে। ’

দেশের আর্থসামাজিব উন্নয়নের তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে আজ আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। কাজেই এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যদিয়ে আমাদের স্বাধীনতার পতাকা আরো সমুজ্জ্বল হবে।

‘বিশ্বের দরবারে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো-এটাই আমাদের লক্ষ্য,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
 
অনুষ্ঠানে ক্যাডেটদের মাঝে ফ্লাইং ব্যাজ, বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ট্রফি এবং সম্মানসূচক তরবারি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। ৭৬ তম বাফা কোর্সে সার্বিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জনকারী সার্জেন্ট মাহিম সালিককে তিনি সোর্ড অব অনার প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী মনোমুগ্ধকর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। তিনি বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের ‘অ্যাপলেট পরিধান’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ উপলক্ষে একটি কেকও কাটেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস, তিন বাহিনী প্রধান, রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২১০৯
ইউজি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।