ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মামলা জটে’ পুলিশের করণীয় কী?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২০
‘মামলা জটে’ পুলিশের করণীয় কী?

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মামলা নিষ্পত্তি কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য গঠিত ‘জেলা আইনশৃঙ্খলা রিভিউ কমিটিতে’ নিজেদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বর্তমানে নিম্ন আদালতে ৩৫ লাখ মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে পুলিশ কী করতে পারে, প্রশ্ন তাদের। এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য কে দায়ী বা কেনো এগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না, সবার আগে তা জানা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন তারা।  

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের তৃতীয় দিন বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে একান্ত এক বৈঠকে এসব প্রশ্ন তোলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সভায় ১০ পুলিশ সুপারসহ ১৯ কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।

মামলা নিষ্পত্তির প্রসঙ্গ ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রসঙ্গে আলোচনা করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রধান ভূমিকায় থাকা সত্ত্বেও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ‘মাদক নির্মূল কমিটিতে’ পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব উপেক্ষিত থাকার অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া পুলিশের পদ বৃদ্ধি করে কাঠামো পরিবর্তন, কর্মকর্তাদের উপযুক্ত যানবাহন বরাদ্দের দাবিও জানান তারা।

বৈঠকসূত্র জানায়, এদিন র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ একাধিক কর্মকর্তা জেলা আইনশৃঙ্খলা রিভিউ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

বৈঠকে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৫ লাখ মামলা নিম্ন আদালতে ঝুলে আছে। মামলা নিষ্পত্তিতে পুলিশ কী করতে পারে? মাদক, আইসিটি, নারী নির্যাতন মামলাসহ অনেক মামলাতেই তদন্তের নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া আছে। পুলিশ তদন্ত শেষ করলেও যদি মামলা ঝুলে থাকে পুলিশের দায় কোথায়?

‘তার এরকম একটা কমিটি নয়, আরো কমিটি করলেও উদ্দেশ্য সফল হবে না। সবার আগে জানতে হবে, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য কে দায়ী, কেন হচ্ছে না? তা জেনেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ’ করণীয় নির্ধারণে সবার জন্য কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে বলে মত তার।

পুলিশকে ‘ন্যাশনাল শক অ্যাবজরবার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতো দোষ পুলিশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে কারা করছে? গোড়ায় হাত না দিয়ে কমিটির পর কমিটি বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।

অর্থনৈতিক অপরাধ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের কাজ করার কোনো ক্ষমতা নেই। জনগণ মনে করে পুলিশ চাইলেই পারে। কিন্তু আইনের কারণে পুলিশ যে পারে না, সেটা তো জনগণ বোঝে না। হয় আমাদের ক্ষমতা দেন, বা অন্যদের, তবুও এ বিষয়টা নিষ্পত্তি হোক।

বৈঠকে মামলার আলামত ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, মামলার আলামত সরবরাহের দায়িত্ব আদালতের। কিন্তু কোনো আদালতে আলামত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর এক লাখের উপরে মামলা হয়। প্রতি মামলায় যদি অন্তত দুইটি করে আলামত জব্দ করা হয়, তাহলে এই দুই লাখ আলামত কোথায় থাকবে? বর্তমান ব্যবস্থায় মামলা নিষ্পত্তি হতে ১২ থেকে ১৫ বছর লেগে যায়। এই দীর্ঘ সময়ে এসব আলামত কোথায় থাকবে? অথচ আলামত নষ্ট হলে দোষ হয় পুলিশের।

‘অনেক তদন্ত কর্মকর্তাকে চাকরির পরও মামলার স্বাক্ষ্য দিতে আদালতে যেতে হয়। কিন্তু তাদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না। অন্য সাক্ষীদের পুলিশ নিজ দায়িত্বে আদালতে নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও সম্মানীর কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সাক্ষী নিরুৎসাহিত হলেও দোষ হয় পুলিশের। ’

পুলিশের প্রয়োজনীয় সংখ্যক দরকারি গাড়ি নেই উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত এসপি হচ্ছে অপারেশনাল পোস্ট। অথচ তাকে কোনো গাড়ি দিতে পারছি না। তাহলে সে ডিউটি কিভাবে করবে? একই পদমর্যাদার বা তার কম পদমর্যাদার অন্য সরকারি কর্মকর্তারা যদি গাড়ি পায় পুলিশ কেন নয়?

মাদক সংক্রান্ত কমিটিতে পুলিশকে মূল্যায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতে আইজিপি নেই, বিভাগীয় পর্যায়ে ডিআইজি নেই, জেলা পর্যায়ের কমিটিতে এসপি নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়া প্রত্যেকটি জেলায় মাদকসেবীদের জন্য বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকারি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন, সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে জঙ্গিদের ডিরেডিকালাইজেশনের জন্য একটি কারেকশন সেন্টার স্থাপনের দাবি জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশে পদ বৃদ্ধি করে কাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যতো দিন যাচ্ছে পুলিশ ততো পিছিয়ে যাচ্ছে। আগে ২৪ বছরে অ্যাডিশনাল আইজিপি হওয়া যেতো, কিন্তু এখন ৩০ বছরেও হতে পারে না। বর্তমানে ৬শ’ জন এসপি রয়েছেন, কিন্তু অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদ আছে মাত্র ১০৭টি। বাকি ৫০০ জনকে কীভাবে পদোন্নতি দেওয়া হবে?

এর ওপরে ডিআইজি পদ রয়েছে ৬৭টি। অ্যাডিশনাল আইজি হতে পারবেন মাত্র ১৭ জন। যে ব্যাচগুলো আসছে তারা তো এসপিই হতে পারবে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে একটা কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান জাবেদ পাটোয়ারী।

বৈঠকে সার্বিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দিন শেষে যে ঘটনাই ঘটুক, সবার নজর থাকে পুলিশ কী করেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করলো, এসবের দিকে। বঙ্গবন্ধু পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা সেই দিকেই যাচ্ছি।

‘আপনাদের দাবিদাওযা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের মতো পুলিশের জন্যও একটি মেডিক্যাল কোর করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত রিভিউ কমিটি যুগোপযুগী করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কমিটিতে আইজিপি, ডিআইজি এসপিসহ বিজিবি প্রধানকেও যুক্ত করার কথা বলবো। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে যদি অধিদফতর একাই কাজ করতো, তাহলে তো সুরক্ষা বিভাগের দরকার ছিল না। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, অধিদফতর সবাই কাজ করছে। জাতীয় পর্যায়ে এই কমিটি রিভিউ করতে বলা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৯
পিএম/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।