ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২০
রাজশাহীতে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪

রাজশাহী: রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম রতন আলী (২২)। তিনি মহানগরের রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার গাজী শেখের ছেলে। এছাড়া নিখোঁজ কনের দুলাভাই। শনিবার (৭ মার্চ) বিকেলে ৩টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

একই ঘটনায় শুক্রবার (৬ মার্চ) রাতে উদ্ধারের পর তার ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে শনিবার (৭ মার্চ) দুপুর সোয়া ১টার দিকে মহানগরের শ্রীরামপুর ঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে এখলাস হোসেন (২২) নামে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তিনি পবা উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আসলাম হোসেনের ছেলে এবং নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার চাচাতো ভাই। এছাড়া এখলাস পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।

এছাড়া দুপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যাওয়া নৌকাটিও উদ্ধার করা হয়েছে।  

শনিবার সকালে রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর চারঘাট অংশের ইউসুফপুর থেকে মনি বেগম (৪৫) নামে আরও এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি নিখোঁজ কনের চাচি। এ নিয়ে পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চারজনে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় পাঁচজন।

নিখোঁজদের খুঁজতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে চারটি উদ্ধারকারী ইউনিট। এরমধ্যে রাজশাহী সদর ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি রংপুর থেকে আসা একটি, বিআইডব্লিউটির একটি এবং বিজিবির একটি ইউনিট নদীতে কাজ করছে।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলে। পরে মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। শনিবার সকাল থেকে চারটি ইউনিট আবার উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। এরমধ্যে রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তে পদ্মা নদী থেকে বোরকা পড়া অবস্থায় মধ্যবয়সী ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবির টহল দল।  

বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা নিখোঁজদের উদ্ধারে ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে রাজশাহী চারঘাট সীমান্ত পর্যন্ত স্পিডবোট নিয়ে টহল পরিচালনা করছে।  

এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিখোঁজ ছিল। তবে রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছেন আরও ১৭ জন। এখন সর্বশেষ প্রায় ছয় জন নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও বিআইডব্লিউটির তিনটি ইউনিট এবং বিজিবির একটি ইউনিট যৌথভাবে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সকালে উজানের ৫০০ মিটার গভীরে অনুসন্ধান চালানো হয়। দুপুরে ভাটির ৫০০ মিটারে অনুসন্ধান চলছে।  

তিনি আরও বলেন, মানুষ পানিতে ডুবলে সাধারণত ৩৬ ঘণ্টা পর ভেসে উঠতে শুরু করে। এজন্য নৌ পুলিশ, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকা থেকে শুরু করে পদ্মাপাড় ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে থাকা চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছেন।

শুক্রবার স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, পদ্মা নদীতে বিয়ে বাড়ির দু’টি নৌকা ডুবে গেছে।

দুই নৌকায় প্রায় ৩৮ জন যাত্রী ছিলেন। ঘটনার পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এরমধ্যে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর মরিয়ম খাতুন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল প্রায় ২৪ জন। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছে আরও ১৭ জন।  

শনিবার দুপুরে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে এখনও প্রায় পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় বরের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে নতুন বউ নিয়ে ফিরছিলেন। ফিরোনি অনুষ্ঠানের জন্য বর-কনেসহ কনে পক্ষের লোকজন নদীর ওপারের চরখিদিরপুর গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এপারে থাকা পবা উপজেলার ডাঙেরহাটে ফেরার পথে মহানগরের রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে থাকা মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছয়জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া উদ্ধারকৃতদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত শিশুর মরদেহ সকালে তার মহানগরের বসুয়ার নিজ বাসায় নেওয়া হয়। শনিবার সকাল ১০টার দিকে বসুয়া জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এছাড়া রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল নৌকার মাঝি খাদিমুল ইসলাম (২৩), নিহত রতন আলীর স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তারকে (৬)। আর রতনের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মায়ের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। আর মেয়েকে নিয়ে নদীতে সাঁতরে উঠেছিলেন সুমন-নাসরিন দম্পতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০, আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।