শুক্রবার (২০ মার্চ) ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কনফারেন্স হলে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস: সর্তকতায় সুরক্ষা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা অবশ্যই চাই বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন মানুষকে না ঠকায়।
‘ফলস নেগেটিভ, যার পজিটিভ তাকে বলবে নেগেটিভ এবং সে বাজারে অবাধে ঘুরে বেড়াবে। যে ফলস পজিটিভ, হয়তো দেখা যাচ্ছে সে নেগেটিভ। কিন্তু তাকে ফলস পজিটিভ বলে শুধু সমাজে আতঙ্ক ছড়ানো। আমাদের কাছে ফলস পজিটিভ হলে বেশি ভয় নাই। কারণ আমরা আবার পরীক্ষা করতে পারবো। কিন্তু ফলস নেগেটিভ হলে আসলেই অনেক ভয়ের কারণ। যে সমস্ত রেপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (আমরা দেখেছি সারা পৃথিবীতে) বিশেষ করে ফলস নেগেটিভের হার খুব বেশি। কাজেই আমরা এই ঝুঁকি একদমই নিতে চাই না। যদিও অনেকে (বেসরকারি হাসপাতাল) দাবি করছেন। ’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ১ লাখ কিট আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়তো বেশিও আনতে পারি। বিভিন্ন হাসপাতালে যেখানে সন্দেহ করা হয় সেসব জায়গা সন্দেহভাজন রোগীদের যেন টেস্ট করতে পারি। এমনকি যেসব কমিউনিটিতে বিদেশিরা আছে, তাদের সংস্পর্শে যারা আছে, পরিস্থিতি বোঝার জন্য সেখানে আমরা র্যানডমলি টেস্ট করবো। সঠিকভাবে আমাদের রেসপন্সটা তৈরি করা হবে। ডাক্তার এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার ইক্যুইপমেন্ট আনছি।
‘আমাদের জন্য সুখের খবর চীন ইতোমধ্যে প্রায় করোনামুক্ত হয়েছে। দেশটিতে এই সময়ের মধ্যে প্রচুর ক্যাপাসিটি তৈরি হয়েছে। আমরা আনছি এবং বাংলাদেশে তৈরি করছি। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর কোনো অভাব হবে না। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে আছে। দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে আমাদের টেস্ট করার ব্যবস্থা আছে। আমরা অতিরিক্ত আরও ৭টি আর্টিফিসারি মেশিন কিনে ফেলেছি। ১৬টি মেশিন কিনবো। প্রত্যেকটি জায়গায় দুটি করে মেশিন দেবো। যেন একটি খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি চালু করা যায়। ’
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলোর উদ্দেশ্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সর্দি কাশির রোগীকেও হাসপাতালে ভর্তি করুক আমরা এটা চাই না। ইতিমধ্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগ আলাদা হবে। যেসব রোগীদের একান্তই ভর্তি করানো দরকার তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করতে হবে। হাসপাতালের আলট্রাসোনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান মেশিন যেন এসব রোগীদের জন্য ব্যবহার করা না হয়। সারাদেশ থেকে রোগী বহনের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছি।
‘যারা বিদেশ থেকে এসেছেন এবং তাদের সংস্পর্শ যারা পেয়েছেন চিহ্নিত করে তাদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ নেমে পড়েছে। এটা জোরদার করতে হবে। অবশ্যই সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী (মাস্ক, সাবান ও পানি) নিশ্চিত করতে হবে। ’
আরও পড়ুন>> করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট
তিনি আরও বলেন, আমরা আইসোলেশনের জন্য গ্যাস্ট্রো লিভার ও বার্ন ইউনিটকে সম্পূর্ণ ভ্যাকেন্ট করছি। কারণ এই সমস্ত হাসপাতালে সব সুবিধা আছে। এছাড়াও কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, জাতীয় জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশি ই মাহবুব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফায়েজ, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুসতাক আহমেদ, ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল কলেজের রিচার্স সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ইউনিভার্সাল ফিভার (জ্বর) ক্লিনিকের কনসালটেন্ট ডা. আহমেদুল কবির, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাকিল আহম্মদ ও ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
এসই/এইচএডি/