প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেপিএম-এ দীর্ঘদিন ধরে কাঁচামাল সংকট দেখা দেয়। চালানের জন্য সরকারি কোনো অর্ডারও নেই।
গত ২৩ মে মহাব্যবস্থাপকের পক্ষে কেপিএম এর ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. মাজহারুল ইসলাম সই করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ আদেশ জারি করা হয়। এ আদেশ জারির পর থেকে মিলের সব উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে মিলের অস্থায়ী কর্মচারী এবং শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে।
এসব কর্মচারী এবং শ্রমিকদের দাবি-তারা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মিলে কাজ করতেন। হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের কারণে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কেপিএম আবাসিক এলাকায় বসবাসরত স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, মিলে উৎপাদন বন্ধ বা চালু রাখা সেটা সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের বিষয়। কিন্তু আবাসিক এলাকায় কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ বন্ধ রাখায় তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
তারা আরও জানান, রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা এবং সকালে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। দিনে একবার যে পানি সরবরাহ করা হয়, সেটা নদীর ঘোলা পানি, যা বিশুদ্ধ না করেই সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংকট সময়ে এই পানি ব্যবহার তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কেপিএম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, কাঁচামাল ও বিক্রয় সংকটের কারণে কেপিএম এর উৎপাদন বন্ধ আছে। সেইসঙ্গে আবাসিক এলাকায় পানি এবং বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে তাদের কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কেপিএম এর ব্যবস্থাপক ( উৎপাদন) গোলাম সরোয়ার জানান, বর্তমানে মিলে কিছু কাঁচামাল সংকট আছে। কেপিএম থেকে কাগজ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কারিকুলাম ফর টেক্সট বোডর্ (এনসিটিবি) কাগজ না কেনায় গত ২৪ মে থেকে কেপিএম-এ উৎপাদন করা হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, কেপিএম থেকে এনসিটিবি ১০০০ মেট্রিকটন কাগজ কেনার কথা ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি কাগজ কিনলে এ সংকট থাকবে না বলেও যোগ করেন তিনি।
কেপিএম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা যায়, এই মিলটি বর্তমানে আমদানিকৃত পাল্প রিসাইকেল পেপার থেকে কাগজ উৎপাদন করে আসছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মে পর্যন্ত বিসিআইসির এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৮৫ মেট্রিকটন পর্যন্ত কাগজ উৎপাদন করেছে। তবে সরকারি কাগজ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এনসিটিবি যদি কেপিএম থেকে কাগজ কিনে তাহলে এ সংকট আর থাকবে বলে জানান তারা।
বিসিআইসির এই প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেট্রিকটন হলেও বর্তমানে বার্ষিক ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদনের ফলে এটি একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান।
দীর্ঘদিন ধরে মিলে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক কর্মকর্তারা জানান, যদি দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন হয় তাহলে এই মিলটির আর লোকসান গুনতে হবে না। বর্তমানে যে যন্ত্রপাতি আছে তা দিয়ে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করা যেত। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাগজ উৎপাদনের ফলে এনসিটিবিসহ সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এই মিলটি থেকে কাগজ কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২০
আরএ