ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুহূর্তেই নিঃস্ব হলো তালুকদার পরিবার!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
মুহূর্তেই নিঃস্ব হলো তালুকদার পরিবার! হারুন-অর রশিদ তালুকদার ও তার পরিবারের সদস্যরা, ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: হারুন-অর রশিদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম তালুকদার, আকতার হোসেন তালুকদার ও সাইদুল ইসলাম তালুকদার।  

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচ ঠাকুরী গ্রামের তালুকদারবাড়ীর চার ভাইয়ের একান্নবর্তী পরিবার।

তিন বিঘা জমির উপর তাদের বাড়িতে একটি টিনসেড ও ১১টি অর্ধপাকা ঘর। ছিল তিন হাজার মুরগির খামার। বাড়ির সামনে আরও চার বিঘা জমিও ছিল তাদের। গাছপালা, আসবাবপত্র সব মিলিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা সম্পদের মালিক তালুকদার পরিবারটি মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে গেল।  

শুক্রবার (২৪ জুলাই) হঠাৎ করেই যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে এই পরিবারটি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাড়িঘর-জমিজমা সবকিছুই বিলীন হয়ে যায়।  

শনিবার (২৫ জুলাই) পাঁচ ঠাকুরী যমুনা বাজার এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ওয়াপদার ঢালে দু-একটি খোলা টিনের চালের ছায়ায় অবস্থান করছেন এ পরিবারটি। চেয়ারে বসে রয়েছেন বাড়ির বড় ছেলে হারুন-অর রশিদ তালুকদার। তিনি বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ওয়ার্কশপ সহকারী পদে কর্মরত রয়েছেন। তার পাশে দাঁড়ানো ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম ও আকতার হোসেন। তারা দুজনেই মুরগির খামার ব্যবসায়ী। অপর ভাই সাইদুল ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।  

ক্ষতিগ্রস্ত হারুন-অর-রশিদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার হঠাৎ করেই সিমলা স্পারটি দেবে যায়। শুরু হয় তীব্র নদীভাঙন। কেউ বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক ভেঙে পড়তে থাকে বসতভিটা।
আমাদের ১১টি অর্ধপাকা ও একটি পুরো পাকা ঘর মুহূর্তেই নদীতে চলে যায়। এমন ভাঙন আমরা কখনো দেখিনি। ভাঙনের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে, কোনো আসবাবপত্র আমরা সরাতে পারিনি। আমার বড়মার কাছে দুই ভরি স্বর্ণের গয়না, দেড় লাখ টাকা নগদ ছিল-সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে কোনোমতে বৃদ্ধা বড়মাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছি। ঘরের দু-একটি চাল ছাড়া আর কিছুই আনতে পারিনি।  

আমিনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমরা দুই ভাই মুরগি খামারের ব্যবসা করতাম। খামারে প্রায় তিন হাজার মুরগি ও ডিম ছিল, ঘরে ছিল ব্যবসার আরও প্রায় চার লাখ টাকা। এমনভাবে ভাঙলো যে নিজেদের জীবন নিয়ে ফিরে আসাই দায় হয়ে পড়েছিল। সম্পদের দিকে ফিরে তাকানোর কোনো সময় ছিল না।  

তালুকদার পরিবারের সদস্যরা বলেন, বাড়ি-ঘর ছাড়াও খাট, আলমিরা, শো-কেস, চেয়ার-টেবিল, গাছপালা, গবাদিপশু। কোনো কিছু্ই তারা আনতে পারেননি। নদীভাঙনে সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে এই পরিবারটি।  

ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিকে দায়ী করে তারা বলেন, আগে থেকেই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিলে এই ভাঙন দেখা দিতো না, আমরাও নিঃস্ব হতাম না।  

এদিকে পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানাতে আসা আত্মীয় কাজিপুর সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম সেলিম রেজা বলেন, আমরাও অবাক হয়েছি। অনেক নদী ভাঙন দেখেছি। কিন্তু এমনটা দেখিনি। ভাঙনের আগেই মানুষ তাদের বাড়িঘর-আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখানে সেই সুযোগটাই অনেকে পায়নি।  

রতনকান্তি থেকে আসা অপর আত্মীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সময়ের কোটিপতি এ পরিবারটি আজ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এ পরিবারটির গুছিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙনে আড়াইশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫টি পরিবার তাদের বাড়িঘর, আসবাবপত্র কোনোকিছুই সরানোর সুযোগ পায়নি। তালুকদার পরিবারের চার ভাই তার মধ্যে অন্যতম। এদের ১২টি ঘরসহ অনেক সম্পদ নদী গর্ভে চলে গেছে।  

ছোনগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল আলম বলেন, ভাঙনে এ পরিবারটি সম্পূর্ণরূপে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা পরিষদে পাঠিয়েছি। তাদের পুনর্বাসনে সরকারি সহায়তার আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে ওয়াপদার উপর আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। শনিবার সরকারি ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার অপু আড়াইশ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।  

রোববার প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় নগদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২০
আরএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ