ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুড়িমারী মসজিদের খাদেমসহ আরও ৫ জন গ্রেফতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
বুড়িমারী মসজিদের খাদেমসহ আরও ৫ জন গ্রেফতার মসজিদের খাদেম জোবেদ আলী।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গণপিটুনিতে নিহত শহীদুন্নবী জুয়েলকে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর দায়ে তিন মামলায় বুড়িমারী মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীসহ (৬১) আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার হলেন ১০ জন।

সোমবার (২ নভেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে মসজিদের খাদেম গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্ত।

ঘটনার পর থেকে প্রথম দফায় ৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার (১ নভেম্বর) আদালতে নেয় পুলিশ। এরপর সোমবার আরও ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলায় মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে প্রথম দফায় গ্রেফতার ৫ জনকে হত্যা মামলায় ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন জানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পরিদর্শক মাহমুদুন্নবী।  
আদালত সোমবার রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে গ্রেফতারকৃতদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারকৃত খাদেমসহ ৫ জনকে সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে আদালতে উঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

প্রথম দফায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ওই এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে আশরাফুল আলম (২২) ও বায়েজিদ (২৪), ইউসুব আলী ওরফে অলি হোসেনের ছেলে রফিক(২০), আবুল হাসেমের ছেলে মাসুম আলী(৩৫) এবং সামছিজুল হকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৫)। এই ৫ আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার দায়ে নিহতের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার (৩১ অক্টোবর) একটি মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার দায়ে পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী বাদী হয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের দায়ে অপর একটি মামলা দায়ের করেন বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত। বহুল আলোচিত তিনটি মামলায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ তিন মামলায় দুই দফায় মসজিদের খাদেমসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে।

নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।

নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন।

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে  জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছুড়ে পুলিশ।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার এসআই শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।  

রোববার (১ নভেম্বর) ঘটনাস্থল তদন্ত করে মসজিদের কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত দলের পরিচালক আল মাহমুদ ফাউজুল কবির। এটা স্রেফ একটি গুজব বলে দাবি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>>বুড়িমারীর ঘটনায় গ্রেফতার করা ৫ জনের রিমান্ড শুনানি সোমবার 

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।