ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

অসমাপ্ত পরীক্ষা, এক বর্ষেই ২০ মাস!

মঈন উদ্দিন, রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
অসমাপ্ত পরীক্ষা, এক বর্ষেই ২০ মাস! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয় গত বছরের ০৮ মার্চ। আর চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয় চলতি বছরের ০৫ মার্চ।

কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শিক্ষার্থীদের পাঁচটি পরীক্ষা বাকি থেকে যায়। ফলে প্রায় ২০ মাস ধরে তারা চতুর্থ বর্ষেই আটকে আছেন। এতে উভয় সংকটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা অসমাপ্ত থাকায় একদিকে সেশন জটের ঝুঁকি, অন্যদিকে রয়েছে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা। ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

কেবল আইন বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা করোনা পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়ে যায়। এসব বিভাগে লিখিত পরীক্ষা, ব্যবহারিক পরীক্ষা ও ভাইভা অসমাপ্ত থাকায় শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরের বর্ষের ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। আবার কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ফল প্রকাশ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের চারটি লিখিত পরীক্ষা, তৃতীয় বর্ষের ব্যবহারিক ও ভাইভা, পপুলেশন সাইন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ব্যবহারিক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক ও ভাইভা, রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ব্যবহারিক, তৃতীয় বর্ষের তিনটি লিখিত ও ব্যবহারিক, দ্বিতীয় বর্ষের দু’টি ব্যবহারিক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তিনটি লিখিত ও ব্যবহারিক, দ্বিতীয় বর্ষের ব্যবহারিক ও ভাইভা বাকি আছে।  

আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পাঁচটি লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা, তৃতীয় বর্ষের তিনটি লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পাঁচটি লিখিত ও ভাইভা, তৃতীয় বর্ষের চারটি লিখিত ও ভাইভা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও মাস্টার্সের একটি করে লিখিত ও ভাইভা ও নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দু’টি লিখিত পরীক্ষা বাকি আছে।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের  দু’টি পরীক্ষা, ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একটি পরীক্ষা, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ব্যবহারিক, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ব্যবহারিক, ফিসারিজ বিভাগের ব্যবহারিক ও ভাইভা পরীক্ষাসহ আরও কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা অসমাপ্ত রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা তাদের সব প্রত্যাশা শেষ করে দিয়েছে। কয়েকটি পরীক্ষা অসমাপ্ত থাকায় তাদের সবকিছু আটকে আছে। এতে দীর্ঘ সেশনজট হতে পারে। তারা অনলাইনে পরের বর্ষের ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে গ্রাজুয়েশন শেষ না হাওয়ায় চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এছাড়া স্বাভাবিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অসমাপ্ত পরীক্ষা নিলেও নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশিত হবে কি-না এ নিয়েও তারা সন্দিহান।  

আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাশরুখ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ায় আমাদের পাঁচটি কোর্সের পরীক্ষা অসমাপ্ত থেকে যায়। ফলে আমাদের সনদপ্রাপ্তির সময়কাল অনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আমরা পরবর্তীকালে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবো না বলে আশঙ্কা করছি। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি চাকরির বয়সসীমা সুনির্দিষ্ট হওয়ায় চাকরি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগও কমে যাচ্ছে। যারা এত দিন টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজে চালাতেন, তারাও এখন পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ফলে পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ এবং আমাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সব মূল কোর্সের পরীক্ষা শেষ। ল্যাব পরীক্ষা অসমাপ্ত থাকায় আগামী বর্ষের ক্লাস করতে পারছি না। বিশেষ কোনো ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা না নিলে সেশনজটে পড়তে হবে।  

এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে। অসমাপ্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়া অসম্ভব না। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি পেলে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবো।

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম খলিলুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক জটিলতার কারণে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতে অংশ নিতে পারছেন না, তারা পিছিয়ে পড়ছেন। চতুর্থ বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যাপারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।  

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পরীক্ষা আটকে থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হোক এটা আমরা চাই না। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টিও আমাদের ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্দেশনা দিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পরীক্ষা নিতে পারবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকার অনুমতি দিলে পরীক্ষা নেওয়া সুবিধা হতো। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে গেলেই শিক্ষার্থীরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিতে আবেদন করতে পারতেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অসমাপ্ত পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।