ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দৃষ্টি-মানসিক প্রতিবন্ধী ৫ জনের সংসার, বেঁচে থাকার সংগ্রাম

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
দৃষ্টি-মানসিক প্রতিবন্ধী ৫ জনের সংসার, বেঁচে থাকার সংগ্রাম

মেহেরপুর: বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তান আর মানসিক ভারসাম্যহীন এক ননদকে নিয়ে পারেসা বেগমের জীবন সংগ্রাম। নিজেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী! তবুও হাল ছাড়েননি সংসারের।

চোখের আলো না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতেই চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন যুদ্ধ।

অভাব-অনটনে বিধ্বস্ত পাঁচ সদস্যের সংসারে শুধু মাত্র পারেছা বেগমের ভাগ্যে একটি মাত্র প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড জুটেছে। অন্য চার জনের জন্য জোটেনি সরকারি কোনো সহযোগিতা।  
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তারাও এই প্রতিবন্ধী পরিবারের কোনো খোঁজ রাখেন না বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।  

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী শাহিন, মানসিক ভারসাম্যহীন ননদ রঙ্গিলা খাতুন, আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই সন্তান পারভেজ (৪) ও হামিমকে (১৫ মাস) নিয়ে পাঁচ জনের সংসার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারেছা বেগমের। মেহেপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলপাড়াতে একটি খুপড়ি ঘরে পরিবারটির বসবাস করতো। সম্প্রতি প্রবাসীদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে টিন ও মেঝে পাকা করে একটি ঘর নির্মাণ ও নগদ কিছু টাকা, চাল-ডাল এবং কয়েকটি ছাগল কিনে দিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এটাই এখন অসহায় এই পরিবারটির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

পারেছা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজে করেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে কাজে নিলেও অর্ধেক মজুরি দেন গেরস্থরা। এই সামান্য টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাড়িতে কিছু ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করি।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী তিন জনের সংসারে পরপর দু’টি সন্তান হলেও তারাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তবুও জীবনের হাল ছাড়িনি। ভিক্ষাবৃত্তি না করে পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাচ্ছি।  

একে তো প্রতিবন্ধী জীবন নিয়ে চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। তার ওপর করোনা পরিস্থিতি এই পরিবারটিকে দু:সহ করে তুলেছে। কোনো কাজ নেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শাহিনের। এখন অন্যের দানেই চলছে তাদের পাঁচ জনের সংসার।

স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের মাথা গোজার ঠাঁইও ছিল না। স্থানীয়ও কিছু যুবক প্রবাসীদের সহযোগিতায় থাকার ঘরটি করে দিয়েছেন। তবে আগামীতে দৃষ্টিহীন এই দুই সন্তানের কী হবে? এই ভেবে কুল পান না পারেছা বেগম। তবুও এগিয়ে যাবার স্বপ্ন তার।

সংসারের হালধরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারেছা বেগম জানান, পরিবারের সবাইকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান মেম্বাররাও খোঁজ নেননি এ পর্যন্ত।  

প্রতিবেশী শাহিন আলম ও রবিউল হক বাংলানিউজকে জানান, করোনা পরিস্থির মধ্যেও অসহায় পারেছা বেগমের পরিবার কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। সরকারি সহযোগিতার অনেক গল্প শুনলেও এমন একটি অসহায় পরিবারের দিকে ফিরেও তাকাননি ইউপি মেম্বর কিংবা চেয়ারম্যান। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত পরিবারটি টিকে আছে। তবে পাঁচ সদস্যের অসহায় এই পরিবারকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর দেবার দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পারেছা বেগমের পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তার চেষ্টা করা হয়েছে। পারেছা বেগমকে ভিজিডি বা সিজিএফের চাল দেওয়া হয়। আগামীতেও তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী মোহা. মুনছুর বাংলানিউজকে বলেন, দুস্থ ও অসহায় পারেছা বেগমের পরিবারকে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা দেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। আর যে সব যুবক এবং প্রবাসীরা অসহায় পারেছা বেগমের পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তাদের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।