ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যাটারি-আইওটি ডিভাইস কারখানা স্থাপনে আসছে নির্দেশিকা

ইসমাইল হাসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
ব্যাটারি-আইওটি ডিভাইস কারখানা স্থাপনে আসছে নির্দেশিকা

ঢাকা: টেলিকম ডিভাইস তথা ব্যাটারি-চার্জার-হেডফোন থেকে শুরু করে আইওটি ডিভাইস এবং অ্যাপস ভিত্তিক ডিভাইস তৈরির কারখানা স্থাপনে বিধি-নিষেধ দিয়ে একটি নির্দেশিকা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
 
‘মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ব্যতীত টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদন কারখানা স্থাপন’ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় টেলিযোগাযোগ পণ্য বাজারজাতকরণ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

বিটিআরসি বলছে, দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য স্থানীয়ভাবে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি সংযোজন ও উৎপাদনে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি, ক্রেতা সাধারণের জন্য কম মূল্যে টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি, অবৈধ আমদানি হ্রাস করার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি রোধ, কারিগরি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা এই নির্দেশিকার উদ্দেশ্য।

বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার পরিধি বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে টেলিকম ডিভাইসের ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য ডিভাইস তৈরির কারখানাও গড়ে ওঠছে। এ লক্ষ্যে খসড়া নির্দেশিকার ওপর মতামত নিয়ে দ্রুতই চূড়ান্ত করা হবে।
 
স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদন যোগ্য পণ্যের তালিকা

নির্দেশিকার আওতায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যতীত কমিশনের অনুমতি নিয়ে নিম্নে বর্ণিত টেলিযোগাযোগ পণ্য বাজারজাতকরণ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদন করা যাবে।
 
১. টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ট্রান্সমিশন এবং রিসিপশন সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের এন্টেনা।
 
২. ওয়াকিটকি সেট, রিপিটার, বুস্টার।
 
৩. আইওটি ডিভাইস (সেন্সর ভিত্তিক, সিম ভিত্তিক এবং সিম বিহীন)।  
৪. আইএসএম ব্যান্ডে ব্যবহৃত টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ডিভাইস।
 
৫. সুইস, রাউটার, ফায়ারওয়াল, মাল্টিপ্লেক্সার ইত্যাদি নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট।
 
৬. টেলিকম ডিভাইস সংক্রান্ত ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন, ব্লুটুথ ডিভাইস ও ব্যবহার্য গেজেট।
 
৭. মেরিটাইম/টেরিস্ট্রিয়াল/স্পেইস কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ডিভাইস।
 
৮. টেলিকম নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাপস ভিত্তিক ডিভাইস।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট ব্যবহার্য পণ্য, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ দেশীয় বাজারে চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি করা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই ইতোমধ্যে বেতারযন্ত্র স্থানীয়ভাবে সংযোজন, উৎপাদন ও রপ্তানি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে মোবাইলফোন উৎপাদনের জন্য কমিশন থেকে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রদান করা হয়েছে এবং বর্তমানে মোবাইল সেটের স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতের দ্রুত প্রসারে টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি প্রতিনিয়তই আমদানি করা হয়ে থাকে।

এতে আরও বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ব্যতীত টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে সংযোজন উৎপাদনসহ দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। এছাড়াও বর্তমানে আইওটি ডিভাইস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল, সাইন্টিফিক মেডিক্যাল ব্যবহৃত ডিভাইস, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সেন্সর ভিত্তিক বিভাগসহ প্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ লক্ষ্যে এই নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়।

ক্যাটাগরি ‘এ’ এবং ক্যাটাগরি ‘বি’ এনলিস্টমেন্ট সনদ

নির্দেশিকার আলোকে দুই প্রকারের ক্যাটাগরি ‘এ’ এবং ক্যাটাগরি ‘বি’ এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রদান করা হবে। প্রথম ক্যাটাগরির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট ব্যতীত টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদন করার পাশাপাশি বাজারজাতকরণ ও রপ্তানির জন্য। মানসম্মত ডিভাইস তৈরির জন্য অত্যাধুনিক টেস্টিং যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ নিজস্ব টেস্টিং ল্যাব ও প্রয়োজনমতো টেস্টিং সুবিধা থাকতে হবে যাতে উন্নত এবং আন্তর্জাতিক মানের টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

আর ক্যাটাগরি ‘বি’ এর ক্ষেত্রে নিজস্ব টেস্টিং ল্যাব এর প্রয়োজন নেই। প্রতিষ্ঠানটিকে তার প্রস্তুতকৃত টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট বেতার যন্ত্রপাতির মান যাচাই করার জন্য কমিশন অনুমোদিত এবং নিজস্ব টেস্টিং ল্যাব সমৃদ্ধ যেকোনো একটি এনলিস্টমেন্ট সনদধারী ক্যাটাগরি ‘এ’ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। চুক্তিবদ্ধ টেস্টিং ল্যাবের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা সংশ্লিষ্ট বেতার যন্ত্রপাতির কারিগরি মান যাচাই সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তীতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান শর্তপূরণ সাপেক্ষে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার সুযোগ পাবে।

এনলিস্টমেন্ট সনদ এর মেয়াদ হবে দশ বছর এবং প্রতি দশ বছর পর পর নবায়ন করতে হবে। প্রথম ক্যাটাগরির জন্য এনলিস্টমেন্ট ফি ১৫ লাখ টাকা এবং বি ক্যাটাগরির জন্য ১০ লাখ টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগরির জন্য নবায়ন ফি সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং বি ক্যাটাগরির জন্য নবায়ন ফি পাঁচ লাখ টাকা।

ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

নির্দেশিকায় ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে। সনদ প্রাপ্তির পর কারখানার ই-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রিসাইক্লেলিং অথবা ধ্বংস করার পূর্ব পর্যন্ত কারখানায় পরিবেশ সম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

সার্ভিস সেন্টার ও তথ্য প্রদান কেন্দ্র

সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবহারকারীদের বিক্রয়োত্তর সেবার মান নিশ্চিত করতে ঢাকায় কমপক্ষে তিনটি এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে কমপক্ষে দুটি করে এবং দেশের সকল জেলা শহরে একটি করে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কালেকশন পয়েন্ট স্থাপন করতে হবে যাতে কোনোভাবেই গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত না হয়।

কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রদান করাসহ কমিশনকে অবহিত করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
এমআইএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।