ঢাকা: শেষ হতে চলেছে আরও একটি বছর। নতুন ক্যালেন্ডারের অপেক্ষায় বিশ্ব।
২০২০ সালে বাংলাদেশে আলোচনায় উঠে আসা এমন নামগুলো হলো:
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী: করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির এক ফোঁটা রক্ত দিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটেই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যাবে৷ বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে এমটাই জানিয়েছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ বিষয়ে তার প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার করেছিল একটি কিটও। বছরের অধিকাংশ সময় করোনাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনায় ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে দেশে করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্টের উদ্ভাবক দলের প্রধান
ড. বিজন কুমার শীল: অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষণাগারে স্বল্প মূল্যের করোনা ভাইরাস শনাক্তের কিট আবিষ্কার করে আলোচিত হয়েছেন। ড. বিজনের এমন সাফল্য এ প্রথম নয়। ১৯৯৯ সালে ছাগলের মড়ক ঠেকানোর জন্য পিপিআর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিলেন। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সিঙ্গাপুরে ভাইরাসটি দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেন তিনি।
ডা. সাবরিনা চৌধুরী: করোনায় দেশের উপকার করতে গিয়ে যখন দুজন আলোচনায় উঠে এলো, তখন করোনা ভাইরাস পরীক্ষার টেস্ট না করেই রিপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণা নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশে। এ প্রতারণায় আলোচনায় জায়গা করে নেয় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা। দায় এড়াতে প্রভাবশালী বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপও করেছেন তিনি। তবে সুফল মেলেনি। বরং একইসঙ্গে তথ্য গোপন করে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মামলায় জড়াতে হয় তাকে।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা: করোনা ভাইরাস মহামারির শুরুতে বাংলাদেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। কোভিড সংক্রান্ত আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ের কারণে প্রচার পান তিনি। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানান ধরনের সমালোচনায়ও পড়তে হয় তাকে। অনলাইনে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছে কেউ কেউ।
ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ: করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে সমালোচনার মুখে সরে যেতে হয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে। ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন ডা. আজাদ। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পরও তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে ওই পদে রেখেছিল সরকার। চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ তাকে দুই বছরের চুক্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটায় নানা অনিয়ম ও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পেলে বিপাকে পড়েন তিনি। শুরুটা হয়েছিল চিকিৎসকদের নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ দিয়ে। এরপর রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি হেলথকেয়ারের জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর তোপের মুখে পড়েন ডা. আজাদ।
গাড়িচালক আবদুল মালেক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনকে জিম্মি করে নিয়োগ, বদলি ও পদন্নোতিতে তদবিরের নামে তিনি আদায় করে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। যার বদৌলতে অল্প দিনেই শত কোটি টাকারও বেশি অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যান ড্রাইভার আবদুল মালেক। শুধু তাই নয়, অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছেন নিজের আত্মীয়-স্বজনকে। তৃতীয় শ্রেণির পদস্থ একজন গাড়িচালক হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করতেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দ পাজেরো গাড়ি। এ দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসতেই আলোচনায় বেশ বড় জায়গা করে নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক।
মোহাম্মদ ইরফান সেলিম: নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর আলোচনা শুরু হয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমকে নিয়ে। পরে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করার অপরাধে তাকে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু চকবাজারে ইরফান সেলিমের ‘নির্যাতন কেন্দ্র’ সবার সামনে আসার পর গণমাধ্যমের সংবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
এইচএমএস/ওএইচ/