ফেনী: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মুহুরী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশের ষষ্ঠ মুহুরী সেচ প্রকল্প।
মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম তাজপুর গোবিন্দপুর মৌজায় মুহুরী নদীতে পাঁচ থেকে ছয়টি বড় কাটিং ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহলটি। এরপর বালুগুলো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে শুভপুর, মুহুরী ব্রিজ, লেমুয়াসহ বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন সেলস সেন্টারে রেখে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে নদীর মিরসরাই অংশের মোবারকঘোনা থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন ওইসব এলাকার পাঁচটি স্পট থেকে লাখ লাখ ঘন ফুট বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী মহলটি। অথচ ওইসব স্পট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা দেওয়া হয়নি।
বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ইজারা নেওয়া হয়েছে কিনা আমরা বলতে পারবো না। আমাদের বালু উত্তোলন করতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই আমরা বালু উত্তোলন করছি। কার মাধ্যমে এসেছেন, কে বালু উত্তোলন করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা নাম জানাতে অপারাগতা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর থেকে ফেনী নদীতে মিরসরাই এলাকায় ইজারা নেওয়া তিনটি বালুঘাটে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এরপর থেকে ওইসব ঘাটে মিরসরাইয়ের বৈধ ইজারারদাররা বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের বিভিন্ন প্রভাবশালী বালু মহল রাত-দিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া ওইসব মহল ধুম মৌজার মোবারকঘোনা, কাটা মোবারকঘোনা ও মুহুরী প্রজেক্ট ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছে। অথচ মিরসরাই অঞ্চলের বৈধ ইজাদাররা বালু উত্তোলন করতে পারছে না।
উপজেলার ওছমানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আজমপুর এলাকায় গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লোকজন প্রতিদিন ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে।
একাধিক মহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন। তারা এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে নদীর পাশে অবস্থিত শত শত মৎস্য প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে যাবে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়বে মুহুরী সেচ প্রকল্প। তাই প্রশাসনের কাছে মুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার দাবি জানান।
এদিকে মিরসরাইয়ে ইজারাদারদের বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় এক শ্রেণির বালু ব্যবসায়ী তিন গুণ দামে বালু বিক্রি করছে। সাত থেকে আট টাকা মূল্যের বালু এখন ২৩ থেকে ২৫ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে মানুষদের।
এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের পাঁচ নম্বর ওছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, ফেনী অংশের একটি সিন্ডিকেট নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। চক্রটি নদীর ১৫০ থেকে ২০০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ধসে পড়বে এবং ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২১
এসএইচডি/আরবি