ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বালু উত্তোলনের মহোৎসব, পরিবেশের সঙ্গে হুমকির মুখে ফসলি জমি

মেহেদী নুর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২১
বালু উত্তোলনের মহোৎসব, পরিবেশের সঙ্গে হুমকির মুখে ফসলি জমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে , যা পরিবেশের জন্য হুমকি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিভিন্ন জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি।

হুমকির মধ্যে পড়েছে আশপাশের বসতবাড়িও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি চক্র বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা হুমকি দেয়। প্রশাসনিকভাবে নিষেধ থাকলেও আইন অমান্য করে তারা সর্বত্র এ কাজ করছে। এমনকি নীরহ মানুষের ফসলি জমি দখল করে বালু উত্তোলন করছে। সাধারণ মানুষের জমি কেনার কথা বলে অল্প টাকায় কিনে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। প্রস্তাবে রাজি না হলে তাদের নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি ধামকি দিয়ে এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কসবার বিনাউটি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত করে পাইপ নিচে বসিয়ে প্রকাশ্যেই বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। উত্তোলিত বালু নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা যায়, বিনাউটি ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে প্রভাবশালী রেজাউল করিমের নেত্বতে একটি চক্র বালু উত্তোলনের নামে পাশ্ববর্তী জমির মালিক মোজাম্মেল হক সরকারে ৩৪ শতক ধানি জমির একাংশ দখল করে আইল বানিয়ে বালু উত্তলনের কাজ শুরু করেছে। টানা ২০ দিন ধরে চলছে এ কাজ। এমনকি তার পাঁচ কানি জমি থেকেও আইন অমান্য করে বালু তুলছে। রেজাউল প্রভাবশালী হওয়াই তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে রাজি হন না।

এ বিষয়ে কথা বলতে রেজাউল করিমকে না পাওয়া গেলে তার ছোট ভাই নাসির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সব জায়গায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে আমরা করলে দোষ কি?’

‘অন্যের জায়গা জোর করে দখলে নিয়ে আপনারা যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জায়গাটি আমাদের কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। তাই আমরা এটি খনন করছি।

এ দিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জমির মালিক মোজাম্মেল হক সরকার কসবায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিবাদীরা উশৃঙ্খল, পরসম্পদ জবরদখলকারী ও লাঠিয়াল। তারা ড্রেজার মেশিন নিয়ে আমার জমি হইতে মাটি কাটার চেষ্টা করিলে আমি তাদের বাধা দিলে আমাকে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। যেকোনো সময় আমাকে ও আমার পরিবারকে খুন করে লাশ ফেলিবে। তাই যেকোনো অঘটনের স্বীকার হওয়াসহ জানমালের নিরাপত্তায় হীনতায় ভুগছি আমি। ’

মোজাম্মেল বাংলানিউজকে বলেন, ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে আমরা অন্যত্র চলে এসেছি। এখন তারা ড্রেজার মেশিন দিয়ে আমার জমি দখল করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় আমি প্রশাসনের কাজে সঠিক বিচার চাই।

কসবা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, কোনো জমির মালিক তার জমি থেকে বেআইনিভাবে বালু উত্তোলন করতে পারবে না। আরেকজনের জমি থেকে কীভাবে করছে এটি হতে পারে না। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।