ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ডিসি অফিসে চাকরি পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের জনি-মারুফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২১
ডিসি অফিসে চাকরি পেলেন তৃতীয় লিঙ্গের জনি-মারুফ

রাজশাহী: তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপনের করুন বাস্তবতার চিত্র জানার পর দু’জনকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ জনগোষ্ঠীর দু'জনকে সোমবার (১ মার্চ) চাকরিতে যোগদান করানো হয়েছে।

 

এদিন সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। আজ প্রথম কর্মদিবস পার করেছেন তারা।

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্য মারুফ কম্পিউটার অপারেটর পদে ও জনি হোসেন অফিস সহায়ক পদে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) নিয়োগ পেয়েছেন। মারুফ মহানগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকার কামালের ছেলে ও জনি হোসেন কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার মুনতাজ শাহের ছেলে।

মারুফ ২০১৯ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন ও জনি হোসেন অষ্টম শ্রেণি পাস। নিজ নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের দু’জনকে নিজ কার্যালয়ে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক।

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দিনের আলো হিজড়া সংঘ আয়োজিত এক সভা চলাকালে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপনের করুন বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরার পর তাৎক্ষণিকভাবে দু’জনের চাকরির ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।

এ সময় আগামী ১ মার্চ থেকে চাকরিতে যোগদান করবেন বলেও জানান তিনি। চাকরি প্রাপ্তদের যতদিন পর্যন্ত সরকারিভাবে স্থায়ী নিয়োগ দিতে না পারবেন ততদিন পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মাসিক একটি সম্মানী ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার তারা নিজ নিজ পদে কাজে যোগদান করলেন।

চাকরিতে যোগদানের পর জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জনি হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগদান করলাম। আমাকে এ পদে পদায়ন করার জন্য জেলা প্রশাসকের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দিনের আলো হিজড়া সংঘের প্রতিও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ কাজ পেয়ে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। তবে আমি আজ থেকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব।

এদিকে চাকরির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মারুফ বাংলানিউজকে বলেন, যোগদানের পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং অনুশীলন করেছি। আমরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অফিসের বিভিন্ন দায়িত্ব বুঝে নিচ্ছি।

তাদের কর্মসংস্থানের জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা মঈন বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দু’জন সদস্য সরকারি চাকরি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। এভাবে সরকারি বিভিন্ন দফতরে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিলে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে। আমাদের জনগোষ্ঠীর মানুষ আদি পেশা (টাকা তোলা) থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর দু’জনকে চাকরির ঘোষণা দিয়েছিলাম। সোমবার তারা যোগদান করেছে। রাজশাহীতে প্রকৃত তৃতীয় লিঙ্গ শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে যোগ্যতানুসারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের ধীরে ধীরে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ তারাও মানুষ তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে। পরিবার ও সমাজচ্যুত করে তাদের কোনোভাবেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২১
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।