ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিপন্ন ইকরের নান্দনিক ফটক

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২১
বিপন্ন ইকরের নান্দনিক ফটক দৃষ্টিনন্দন ইকরের গেট। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বুননে ফুটেছে সৌন্দর্য। মাঝারি আকৃতির শুকনো ইকর (ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ) দিয়ে বুনন করা হয়েছে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের প্রধান ফটক।

যা দৃষ্টিনন্দন এবং ব্যতিক্রমী।

ইকর এক প্রকারের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ। এক সময় বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে এটি দেখা গেলেও বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস, বন উজাড়, কারণে-অকারণে পাহাড়ি এলাকার জঙ্গল এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে সম্প্রতি একদল তরুণ বিপন্ন ইকর সংরক্ষণের চেষ্টা করে চলেছেন।

ভাড়াউড়া চা বাগানের অধিবাসী মধু হাজরার মেয়ের বিয়েতে সাজানো এ গেইটটি সৌন্দর্য পিপাসু পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এ ইকর গেইটটির নির্মাতা নৃ-গোষ্ঠী খাসি অধিবাসী নানসিও নামিং বাংলানিউজকে বলেন, এটি ইকরের তৈরি বিয়ের গেইট। আঞ্চলিক ভাষায় ইকর-কে ভুটাং বলে। এ গেইটটি আমরা তিনজন মিলে তৈরি করেছি। আমার সঙ্গের অপর দুজনের নাম হরতাল সুংহো এবং মিন মানার। বিয়ের এ গেইটটা তৈরি করতে প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

নানসিও আরো বলেন, গেইট তৈরি করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর বিশেষভাবে তৈরি করলে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এখানে অনেক উন্নত ডিজাইন করা হয়। এখানে কামলা খরচ (শ্রমিক) রয়েছে। পাহাড় থেকে কামলা দিয়ে ইকর কেটে আনতে হয়। তারপর লোহা লাগে, কাঠের বার্নিস লাগে।

সাধারণতভাবে গেইট বানাতে দুসপ্তাহ সময় লাগে। আর উন্নত ডিজাইন দিয়ে তৈরি করলে প্রায় ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। এ ইকরের গেইট তৈরি করে বার্নিস দেওয়া পর যতœ করে রাখলে অনেক বছর পর্যন্ত রাখা যায়। তবে বেশি বৃষ্টি এবং রোদে রাখলে ইকরটা কালো রং ধারণ করে নষ্ট হয়ে যায়।

এর উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ইকর দিয়ে খুব ভালো বেড়া তৈরি করা যায়। ইকরের বেড়ায় ঘর ঠাণ্ডা থাকে। গরম দিনে ইকরের বেড়াঘরে থাকলে শরীরে গরম কম লাগে। এজন্য ইকরের ঘরের চাহিদা বেশি। বাগানের শ্রমিকরা এক সময় ইকরের ঘর তৈরি করতে গিয়ে ইকর গাছের গুড়ি থেকে ইকর কেটে এ উদ্ভিদটিকে নষ্ট করে ফেলেছে।

ইকর তো এখন আগের মতো পাওয়া যায় না। আমরা পাহাড়ের গভীর থেকে আমাদের শ্রমিক দিয়ে সংগ্রহ করে আনি। তবে আমরা ইকর সংগ্রহ করার সময় গাছের একদম গুড়ি থেকে কাটি না। গাছের অর্ধেক থেকে কাটি। যাতে করে ইকর গাছটি পুনরায় গজাতে পারে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইকরের ইংরেজি নাম এরধহঃ ঈধহব বা এরধহঃ জববফ কিংবা ডরষফ ঈধহব। এর বৈজ্ঞানিক নাম অৎঁহফড় উড়হধী। এটি চড়ধপবধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ‘টলগ্রাস’ বা উঁচু ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এটি পরিবেশবান্ধব একটি গৃহনির্মাণ সামগ্রী।

ইকর পাহাড়ি গাছ। বিশেষ করে বন-জঙ্গল ও ছড়াগুলোর ধারে এ উদ্ভিদটি বেশি জন্মে। ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে বর্তমানে বনজঙ্গল উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে এ উদ্ভিদটিও বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২১
বিবিবি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।