নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে হকারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আটক হকার নেতা আসাদুল ইসলাম, কালু গাজী ও মানিক দেওয়ানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ওই ঘটনায় পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
বুধবার (১০ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত, সড়ক অবরোধ করে যানজট সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত তিনজনের কাছ থেকে ৫টি বাঁশের লাঠি, ২১টি ইটের টুকরো, কাঠে ডাসা ১১টি, লোহার রড ২টা উদ্ধার করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, মঙ্গলবারের (৯ মার্চ) ঘটনায় বাদী এসআই নুরুজ্জামানসহ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান, এসআই মো. রুবেল, এএসআই শিশির আহম্মেদ হামলাকারীদের আঘাতে জখম প্রাপ্ত হয়েছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে বসার দাবিতে আবারো আন্দোলন করা হকারদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে বিক্ষুব্ধ হকাররা গেরিলা স্টাইলে বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নিয়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনটি যাত্রীবাহী বাস, একটি প্রাইভেটকার, ৬টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে। ওই সময়ে বাস থেকে ভয়ে লাফিয়ে নামতে গিয়ে একজন নারীসহ ৫ জন আহত হয়। হকারদের ইটপাটকেলে অন্তত ১০ জন সদস্য আহত হয়েছে দাবি করেছে পুলিশ।
বিপরীতে হকারদের দাবি পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের নেতা আসাদুজ্জামানসহ অন্তত আরো ১৫ জন আহত হয়েছে।
৯ মার্চ বিকেল ৫টা হতে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক, সলিমুল্লাহ সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে এসব ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, হকারদের ফুটপাতে বসার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ করে আসছে হকারদের একটি অংশ। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় শহরে আবারো বিক্ষোভ করে। চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মিছিলটি চাষাঢ়ায় গোল চত্বর এলাকাতে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। ওই সময়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল আগাতে চাইলে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে ও হকার নেতা আসাদকে আটক করে। এ ঘটনার জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে হকারর। তারা বঙ্গবন্ধু সড়কে মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বিপরীত দিকে সুগন্ধ রেস্টুরেন্টের সামনে কাপড় ঝুট ও চৌকি ফেলে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মোড়েও একই পন্থায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
তখন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামানের নেতৃত্বে পুলিশ অ্যাকশনে যাওয়ার চেষ্টা করলে হকারদের আরেকটি গ্রীন্ডলেজ ব্যাংকের সামনে গিয়ে অবস্থান করে সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেয় সড়কে।
ওই সময়ে আল্লাহ ভরসা, বাধন ও বন্ধন পরিবহনের তিনটি বাস লক্ষ্য করে হকাররা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। আতংকিত হয়ে যাত্রীরা দ্রুত নামতে গিয়ে এক নারীসহ ৫ জন আহত হয়। পরে বাসগুলো দ্রুত সেখান থেকে সরে যায় ও আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে যান। তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
তখন গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক মোড়, সুগন্ধা রেস্টুরেন্টের সামনে ও চাষাঢ়ায় সায়াম প্লাজার সামনে হকারদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটে। পুলিশকে লক্ষ্য করে হকাররা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়। একই সময়ে হকারদের আরেকটি গ্রুপ নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে হকার্স মার্কেটের সামনেও সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায়। সেখানেও পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়
শহরের দুটি সড়ক থেকে যখন হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয় তখন তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে গিয়ে সড়কে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। সেখানে পুলিশ গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে পৌন ৭টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, হকারদের একটি গ্রুপ মিছিল বের করে জনস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটায়। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন হকাররা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে পুলিশের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তাদের পরিচয় পরে জানানো হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ৭ মার্চ (রোববার) বিকেলে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ২ নম্বর রেলগেইট হয়ে গলাচিপা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করেন। সেদিনও হকাররা শহরে বিক্ষোভ দেখায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২১
এএটি