ঢাকা: রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরের পলওয়েল কারনেকশনের সামনে ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণাধীন একটি পিলারের একপাশের অংশ ধসে পড়েছে।
রোববার (১৪ মার্চ) গভীর রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
রোববার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ করতে নির্মাণাধীন র্যাপিড ট্রানজিটের ২২ নম্বর পিলারের উপর নির্মাণ করা হয়েছিল পিআর টি শেফ। তার উপর স্প্যান বসানোর কথা ছিল। তবে ঢালাই শেষ হলে রাতেই সেটি ধসে পড়ে। ধসে পড়ে কংক্রিট ও রডগুলো এখন বের হয়ে পড়ে আছে। উপরের ভারী রডগুলোও বাঁকা হয়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে নির্মাণ শ্রমিকরা ধসে পড়া পিলারের রডগুলো গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে কেটে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিক সুমন বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত আমরা কাজ করেছি। ডিউটি শেষে বাসায় চলে যাই। সকালে এসে দেখি এর একপাশের অংশ ধসে পড়ে গেছে। তবে কীভাবে পড়েছে তা বলতে পারি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস র্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণকাজের আব্দুল্লাহপুর অংশটি বাংলাদেশে সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত। সেখানে প্রজেক্টের ২২ নম্বর পিলারের উপর পিআর টি শেপ অংশের একপাশে ঢালাই শেষ করা হয়েছিল। অবশ্য তা গত রাত ২টার দিকে ধসে পড়ে।
তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি হয়তো ঢালাইয়ের নিচে যে খুঁটি দেওয়া হয়েছিল সেটি হয়তো নড়ে যেতে পারে। সে কারণেও ওই অংশটি ধসে যেতে পারে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর নেই।
‘এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করবো। ওই কমিটি শুধু সিকিউরিটি সংক্রান্ত বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। ’
এদিকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একই প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে থাকা রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপনার কাজের সময় লঞ্চিং গার্ডার ভেঙে পড়ে তিন চীনা শ্রমিকসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আহত পাঁচজন আশঙ্ককামুক্ত হলেও এক চীনা নাগরিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা যায়। আহতরা সবাই এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ্ বাংলানিউজকে বলেন, যন্ত্রের ত্রুটির কারণেই এমন দুর্ঘটনা। এটা মূল পিলারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কেন ঘটলো পরবর্তীসময়ে যাতে না ঘটে এজন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসবো। আপাতত ইমার্জেন্সিটা কেটে যাক।
‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ বিস্তৃত করা হচ্ছে মহাখালী পর্যন্ত। একইসঙ্গে এর আওতায় বিমানবন্দরের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক আন্ডারপাস। বিআরটির আওতায় ছয়টি ফ্লাইওভার ও উড়াল সড়কের কাজ চলমান।
যানজট নিরসনে রাজধানীর সড়ক পরিবহন সেক্টরে স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) সংশোধন করা হয়েছে। প্রথমে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এই রুটের দৈর্ঘ্য ছিল ২০ দশমিক ২০ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫১ শতাংশ।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে চলাচলকারী বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া কোথাও থামবে না। মহাখালী পর্যন্ত অংশ যুক্ত হওয়ার আগে কথা ছিল, দুই প্রান্ত অর্থাৎ গাজীপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে থাকবে দু’টি মূল টার্মিনাল। আর মাঝপথে হবে ২৫টি স্টেশন। প্রতি দুই থেকে ৫ মিনিট পরপর স্টেশন থেকে বাস ছাড়বে। এ সার্ভিসে ভাড়া আদায় হবে স্মার্ট কার্ডে। তবে মহাখালী পর্যন্ত অংশ যোগ হওয়ায় মূল টার্মিনালের একটি গাজীপুরে হলেও আরেকটি হবে মহাখালীতে।
যানজট নিরসনে বিআরটি বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত ব্যবস্থা। বিআরটি লাইসেন্স ছাড়া এ রুটে কেউ বাস চালালে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে আইনে। এছাড়া আইনের কোনো বিধান কেউ লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়ার বিধানও রয়েছে।
**বিআরটির গার্ডার ভেঙে আহত ৬, একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এমআইএস/এসজেএ/এএ