ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রশাসন চাইলেই শাল্লার হামলা ঠেকাতে পারতো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২১
‘প্রশাসন চাইলেই শাল্লার হামলা ঠেকাতে পারতো’ ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রশাসন চাইলেই সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঠেকাতে পারতো বলে দাবি করেছেন নাগরিক প্রতিনিধি দল।

বুধবার (০৭ এপ্রিল) সুনামঞ্জের শাল্লায় নোয়াগাঁও সরেজমিন পরিদর্শনোত্তর ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস।

ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে একটি শ্রেণি মানুষের অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে দাবি করে অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, প্রশাসন চাইলেই বোধ হয় এ ঘটনা রদ করা যেত। কারণ ঘটনার আগের দিন স্থানীয়ভাবে তারা মিটিং-মিছিল করেছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন তা জানত।  

প্রশাসন পরিস্থিতি জানার পরও সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক।

রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, ঘটনার আগে গ্রামের মসজিদে কিছুক্ষণ পর পর মাইকিং করে সেখানে আক্রমণের জন্য লোকজন জড়ো করা হয়। ফলে হাজারো মানুষের আক্রমণের মুখে গ্রাম ছেড়ে পলায়ন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে বাড়িঘর তছনছ করে, লুটপাট চালায়।

অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান নাগরিক প্রতিনিধি দলের এই সদস্য।

ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অবমাননা করা হয়েছে অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা করা, আগুন লাগানো সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি পরিচিত কৌশল বলেও মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

২৬-২৭ মার্চ নাগরিক প্রতিনিধিদের একটি দল সুনামগঞ্জের শাল্লায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান। এই নাগরিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন ও জাসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী তনিমা সিদ্দিকী, প্রবীণ কৃষকনেতা অমর চাঁদ দাস, উন্নয়ন সংস্থা এএলআরডি সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী, আইইডির সহসমন্বয়কারী হরেন্দ্র নাথ সিং, আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ হাসেমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

ঘটনা সংঘটনের দশদিন পর উক্ত সরেজমিন পরিদর্শনে প্রত্যক্ষ ঘটনা তুলে ধরতেই প্রতিনিধিদল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।


সংবাদ সম্মেলন/ ছবি: বাংলানিউজ

এএলআরডি সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার এতদিন পর গিয়ে আমি যা দেখলাম, যদি কোনো রাষ্ট্রে কোনো সরকার থাকে এবং নাগরিকদের ন্যূনতম স্বীকৃতি থাকে তবে এতদিনে অনেক কিছু ঘুচে যাওয়ার কথা, সেটা হয়নি। আমরা কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা এটা দিয়েই উপলব্ধি করতে পারি।
রাজনৈতিক দলের মদদ ছাড়া এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বেড়ে উঠা সম্ভব নয় দাবি করে রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, এক ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তার যখন বিচার হয় না তখন আরেকটি ঘটনা সংঘটনে এটি মদদ যোগায়। কাজেই প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার করতে হবে।

এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, মাঠ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা এ ঘটনা রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, আক্রান্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ঘর বাড়ি পুনর্নির্মাণসহ প্রতিনিধিদল আট দফা সুপারিশ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২১
এমইউএম/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।