কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান মিন্টুর হাত-পা কর্তনের ঘটনার ২৭ দিন পর মূল আসামি মেহেদী হাসান বাঁধনসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- মেহেদী হাসান বাঁধন (৩০), রশিদ মিয়া (৩৫), মাজহারুল ইসলাম মনোয়ার (৩০) ও আল আমিন আহম্মেদ শুভ (২৬)।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) উৎপল কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেল বি মাহমুদুল হাসান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার প্রমুখ। প্রেস ব্রিফিং শেষে চাঞ্চল্যকর এ মামলার মূল আসামিসহ গ্রেফতারদের সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত করা হয়।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ঘটনার পর চলতি মাসের ৯ এপ্রিল এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কুড়িগ্রাম সদরের কৃঞ্চপুর বকসীপাড়ার আল আমিন আহম্মেদ শুভকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি শুভ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। শুভর কাছে অন্যান্য আসামিদের সম্পর্কে ধারণা পেয়ে পুলিশ অভিযানে নামে। মামলা রুজুর পর থেকে আসামিরা দেশের বিভিন্নস্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) উৎপল কুমার রায় ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) পবিত্র সরকারসহ পুলিশের একটি দল ঢাকায় অভিযান চালান। বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাতে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাস্টারমাইন্ড (এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি) কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী শিবরাম এলাকার মেহেদী হাসান বাঁধন এবং (এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি) কাঁঠালবাড়ী তালুক কালোয়া এলাকার রশিদ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করে রাতেই কুড়িগ্রামে নেওয়ার পথে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী আধগ্রাম খোলারপাড় এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মাজহারুল ইসলাম মনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, চার আসামির মধ্যে বাঁধন ও আব্দুর রশিদ এজাহারভুক্ত আসামি এবং মাজহারুল ইসলাম মনোয়ার ও আল আমিন আহম্মেদ শুভ এজাহারভুক্ত না হলেও তদন্তে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আসামিরা হত্যাকাণ্ডে ৬ জন অংশ নেন বলে স্বীকার করেছেন। এছাড়া সহায়তা করা, আশ্রয় দেওয়া এবং সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ ও সংরক্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগে সবাইকে আইনের আওতায় আনতে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলায় অপর আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আসামি গ্রেফতার কার্যক্রম শেষে স্বল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আতাউর রহমান মিন্টু মোটরসাইকেল করে বন্ধুদের সঙ্গে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই এলাকায় যাওয়ার সময় ছবরুল মাস্টারের বাড়ির পাশে আসামিরা পথরোধ করেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সময় মিন্টুকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তার ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন এবং বামহাত ও দুই পা কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেন।
ঘটনার দু’দিন পর ১৮ মার্চ মিন্টুর বাবা আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে বাঁধনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে রাজারহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২১
এফইএস/এমআরএ