ঢাকা: রাজধানীর এলিফেন্ট রোড এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি ডা. জেনির আচরণ ‘অসৌজন্যমূলক’ অবিহিত করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে এই প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের এই চলমান কার্যক্রমে গত ১৮ এপ্রিল (রোববার) ঢাকা মহানগরীর এলিফেন্ট রোড এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ, হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু চিত্র গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এটা বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
‘ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই স্থানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে চেকপোস্ট চলাকালে জনৈক চিকিৎসককে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়। এতে তিনি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। ’
আরো পড়ুন>>>সড়কে ডা. জেনিকে হেনস্তা: দোষীদের শাস্তি দাবি স্বাচিপের
বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদেরই অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকেই কটাক্ষ ও হেয়প্রতিপন্ন করেছেন, যা মিডিয়াচিত্রে প্রতীয়মান। শুধু তাই নয়, তিনি নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবাসহ অন্য কার্যক্রমে জড়িত সবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাপ্তরিক পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা অমান্য করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার পরিচয় না দিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন। ওই চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদকালে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা অত্যন্ত কুরুচিকর ও লজ্জাজনক।
‘এক পেশার সদস্য হয়ে আরেক পেশার কর্মকর্তাদের তিনি কী ভাষা প্রয়োগ করেছেন তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের তুই বলে সম্বোধন করেছেন এবং ‘আর আমি কি, সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা’ বলে হুমকি দিয়েছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বিশেষত চলমান বৈশ্বিক মহামারির এই দুঃসময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ সর্বজন স্বীকৃত। এই পর্যন্ত কর্তব্যরত অবস্থায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৯১ জন বীর পুলিশ সদস্য শাহাদত বরণ করেছেন এবং ২০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ’
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে দেশ মাতৃকার সেবায় সরকারের যথাযথ নির্দেশনা পালনে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য বদ্ধপরিকর। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার্থে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বৈশাখের এ তীব্র তাপদাহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। পেশাগত বৈচিত্র্যের কারণে পুলিশের এ চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালনকালে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনা সংকটে দেশের স্বার্থে ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে ও করোনার বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে করোনা সংকট এবং করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় মেডিক্যাল সার্ভিসে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অব্যাহত কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সর্বদা কৃতজ্ঞ। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনৈক চিকিৎসকের এহেন অপেশাদার ও অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
একজন গর্বিত পেশার সদস্য হয়ে অন্য একজন পেশাদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ বা অসৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়। নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লংঘন এবং কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসজেএ/এএ