ঢাকা: ভারতে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ভারতের সঙ্গে সব স্থলসীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
রোববার (২৫ এপ্রিল) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানান, সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে দুই সপ্তাহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ থাকবে। তবে স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ৯ মে বিকেল ৬টা পর্যন্ত স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
১৫ দিনের ভিসার মেয়াদ নিয়ে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা দিল্লি, কলকাতা এবং আগরতলার বাংলাদেশ মিশনের অনুমতি দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তারা কেবল বেনাপোল, আখাউড়া এবং বুড়িমারী বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। এসব নাগরিকদের বাধ্যতামূলক প্রবেশের ৭২ ঘণ্টা সময়ে টেস্ট করা কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে।
এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে প্রবেশকারী নাগরিকদের দুই সপ্তাহ অফিসিয়াল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বেনাপোল, আখাউড়া এবং বুড়িমারী এই তিনটি স্থল বন্দর ছাড়া অন্য সকল স্থল বন্দর আগামী দুই সপ্তাহের জন্য পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
আমদানি পণ্য বহনকারী গাড়িগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের আগে যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট চালক ও হেলপারকে কঠোর ভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। আপদকালীন এই সময়ে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেলপথ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহ কার্যকর থাকবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সময় ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ভারতে বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ। গত ১০ দিনে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দুই হাজারের বেশি।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার স্থলসীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দিনের জন্য।
চলতি মাসের প্রথম থেকেই ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঢোকায় সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ভাঙতে থাকে রেকর্ডের পর রেকর্ড। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন প্রতিদিন বিশ্বরেকর্ড
গড়ছে দেশটি। এ পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ভারতে যে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে সেটি ৩শ গুণ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশ ভারতের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সফর বাতিল করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
গত কয়েকদিনে ভারতের শ্মশানগুলোতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করেও মিলছে না মরদেহ দাহ করার সিরিয়াল। কখনো জ্বালানো হচ্ছে গণচিতা। আর এসব ছবি এখন বিশ্বব্যাপী ভাইরাল। বাংলাদেশেও একই সময় থেকে সংক্রমণ-মৃত্যু বেড়েছে। এর মধ্যে যেন ভারতের ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে দেশে প্রবেশ করে সংক্রমণ-মৃত্যু আরো না বাড়াতে পারে সেজন্য সতর্ক
তা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলো সরকার।
আরো পড়ুন>>>ভারতে থাকা বাংলাদেশিরা ফিরতে পারবেন না ২ সপ্তাহ
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২১
টিআর/এএ