ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গুলিতে নিহত দুই জনের নামে মামলা হয়েছে।
এরা হলেন-আসাদুল্লাহ রাতিন (১৬) ও কামাল মিয়া (৩১)।
নিহত কিশোর আসাদুল্লাহ রাতিন সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের শফিকুল ইসলামের ছেলে ও কামাল মিয়া মজলিশপুর ইউনিয়নের বড় বাকাইল গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে।
নিহতদের পরিবার ও মামলার এজাহারে বলা হয়, কামাল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ২৮ মার্চ বেলা ১০টার মধ্যে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার একদিন পর গত ২৯ মার্চ রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে গুলিবিদ্ধ রাতিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
এর দুইদিন পর হেফাজতের সহিংসতার ঘটনায় ৩১ মার্চ রাতে সদর থানা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪৫০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের করা এই মামলার এজাহারে ১০ নম্বর আসামি হিসেবে নিহত কামাল মিয়ার নাম রয়েছে। একই মামলায় ১৫ নম্বর আসামি হিসেবে নিহত রাতিনের নাম রয়েছে, তবে তার বয়স লেখা হয়েছে ২৫ বছর।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৭ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সদর উপজেলার নন্দনপুর বাজার স্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় হেফাজতের কর্মী-সমর্থক ও স্থানীয় জনতা রাস্তায় টায়ার, কাঠের গুঁড়ি ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে অগ্নিসংযোগ করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তারা সরকার ও পুলিশকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে স্লোগান দেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রইছ উদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন পুলিশ নিয়ে নন্দনপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছেন। এ সময় বিক্ষোভাকারীরা দেশীয় অস্ত্র রামদা, বল্লম নিয়ে পুলিশকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্য সেখানে শর্টগানের ফাঁকা গুলি, সিসার গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে আসামিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তখন রাস্তায় অজ্ঞাতনামা তিন জনকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। পরে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
নিহত কামালের মা হোসনা বেগম বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পাই কামাল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে আরেকজন জানান কামালকে কুমিল্লা নিয়ে গেছে। পরদিন ২৮ মার্চ কামালের মৃত্যুর খবর আসে। ২৯ মার্চ রাতে গ্রামের কবরে তাকে দাফন করা হয়।
আসাদুল্লাহ রাতিনের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে তার মায়ের ওষুধ আনতে বাইরে গিয়েছিল আর ফিরে আসেনি। খোঁজাখুজির পরে জানা যায় সুহিলপুর তিন নম্বর গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় আসাদুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কুমিল্লা থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৯ মার্চ রাতে সে মারা যায়।
জানতে চাইলে ওই মামলার বাদী সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন বলেন, আমি ২৭ মার্চের ঘটনা দেখেছি। তখন তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো। পরে হয়তো তারা মারা গিয়েছে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাললাটি তদন্ত করতে গেলে এলাকাবাসী জানিয়েছে, মামলার আসামি রাতিন মারা গেছে। অন্যদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র থেকে নিহতদের নাম বাদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২১
আরএ