ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিজিটাল জীবন-০৪

ফোন কলেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে সরকারি সেবা!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২১
ফোন কলেই ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে সরকারি সেবা!

ফেনী: করোনার প্রভাবে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি নেই বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ফারভেজুল ইসলামের (ছদ্মনাম)। এমন সময় এসেছে ঈদ, কারোর কাছে টাকা ধার করতেও পারছিলেন না ওই শিক্ষক।

  উপায়ন্তর না দেখে কল দিলেন সরকারি হেল্প লাইন ৩৩৩ নম্বরে। পরদিনই উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গেছেন তার বাড়ি।

সরকারি ত্রাণ পাওয়া কলেজ শিক্ষক বললেন করোনার এ সংকটকালে এটি অনেক বড় পাওয়া। সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় ‘৩৩৩ কল সেন্টার’ জাতীয় তথ্য ও সেবা দিতে কাজ করছে, যার সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।

এ হেল্প লাইনে ফোন করে ত্রাণ পাওয়ার সংখ্যা নিতান্তই কম নয়, সম্প্রতি জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ৩৩৩ নম্বরে কল করা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে সোনাগাজী উপজেলা অজিত দেব।  

তিনি বলেন, ৩৩৩ নম্বররে কল করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলো মানুষগুলো। পরে সেই কলের আলোকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী। মানুষগুলোর পারিবারিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করে প্রকাশ করা হয়নি নাম পরিচায়।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, ৩৩৩ নম্বরে সহায়তা চেয়ে অনেকে যোগাযোগ করেছেন। জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সময় বাড়ার সঙ্গে এ কার্যক্রমে মানুষের সাড়া বাড়াচ্ছে।  

শুধু এই একটি হেল্প লাইন নয়, সরকারের এমন আরো অর্ধ শতাধিক হেল্প লাইন রয়েছে যা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ সেবা গ্রহণ করছে। সরকারের এ প্রযুক্তিগত সেবার কারণে নীরবে উপকৃত হচ্ছেন দেশের সাধারণ নাগরিকরা।

নির্দিষ্ট হেল্পলাইনে কেউ ফোন করলেই অপর প্রান্ত থেকে কি ধরনের সহায়তা তিনি চান, প্রথমে তা জানতে চাওয়া হয়। সমস্যা শোনার পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা দেওয়া হয়। কেউ রাস্তায় বিপদে পড়ে ফোন দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে মিলছে সেবা।  

তেমনই একজন জেলার পরশুরাম উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী (২৫)। গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির নির্যাতেন শিকার হয়ে কল করেছিলেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। ওপ্রান্ত থেকে গুরুত্ব সহকারে শোনা হয় তার কথা নেওয়া হয় অভিযোগ। একদিন পরেই পুলিশ আটক করে নির্যাতনকারী ওই প্রভাবশালীকে।  

সরকারি হেল্প লাইন থেকে উপকারভোগী এ নারী বলেন, সরকারি সেবা এত সহজে পেয়ে যাবো তা কখনো কল্পনাই করতে পারিনি। ফোন করার পরে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।  

জেলা তথ্য অফিসার রেজাউল বারী মুনির বলেন, ৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনেই ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (ফোন কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। এ হেল্প লাইনটিতে ফোন করলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স-সংক্রান্ত সেবা পাওয়া যায়।

সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে কাজ করা আবুল খায়ের নামে এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইনি কিংবা খাদ্য সহায়তা নয়, এসব হেল্প লাইনে ফোন করে কৃষকও পাচ্ছেন সেবা। কৃষকের সেবার জন্য চালু আছে ৩৩৩১ কৃষক বন্ধু সেবা ও কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩।
 
এ বিষয়ে কথা হয় নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর এলাকার কেফায়েত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি তরমুজের মৌসুমে চাষাবাদ সংক্রান্ত একটি জটিল সমস্যায় পড়ি। স্থানীয় এক কলেজ পড়ুয়া থেকে জেনে ফোন করি কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে। সেই কল সেন্টার থেকে দেয় হয় পরামর্শ। তাদের পরামর্শের আলোকে চাষাবাদ করা তরমুজের ফলনও হয়েছে ভালো।  

ফয়সাল আবেদীন নামে এক লেখক ও গবেষক বলেন, সরকারের এসব সেবার কারণে মানুষ অকল্পনীয়ভাবে সেবা পাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনি সহায়তা ও প্রবাসীদের নানা সহায়তা মিলছে এসব হেল্প লাইনের মাধ্যমে।    সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেখা-দেখি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এখন হটলাইন কেন্দ্রিক সেবা চালু করেছে। এটি সমাজের জন্য ইতিবাচক। এ ধরনের উদ্যাগের ফলে সেবা সহজীকরণ হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।