লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসকে স্বপদে বহাল রাখার নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (১ জুন) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মমতাজ বেগম স্বাক্ষরিত পত্রে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর আগে, সোমবার (৩০ নভেম্বর) অসদাচরণসহ ছয়টি কারণ উল্লেখ করে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান চিত্ত রঞ্জন সরকার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আদিতমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনসহ ১৮ জন কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়টি বিষয়ে অভিযুক্ত করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব নুমেরী জামান।
যেসব অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছিলেন চেয়ারম্যান :
আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকিও দিয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন অভিযোগ দায়ের করেন। চেয়ারম্যান ফারুক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরে আর্থিক বিষয়ে অনৈতিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা নুরেলা আখতারের সঙ্গে অশোভন আচরণ প্রদর্শন করেন। চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডে উপজেলার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে জনস্বার্থ মারাত্মভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
চেয়ারম্যানের এসব কার্যকলাপ রাষ্ট্র বা উপজেলা পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থি। তাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ সালের এবং সংশোধিত আইন ২০১১ এর ১৩(খ)(১) ধারা অনুসারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই পদে সব কার্যক্রমসহ আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয় উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকে।
>>>আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক বরখাস্ত
বরখাস্ত চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস স্থানীয় সরকার বিভাগের এ আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন (৯৬৮৭/২০২০) দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বরখাস্তাদেশ স্থগিত করে রায় দেন। যা আপিল করেন রাস্ট্রপক্ষ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মহামান্য হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ বহাল রেখে রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ জুন) স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত একটি আদেশে আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসকে স্বপদে বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে পত্র দিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো পত্র আমার হাতে পৌঁছায়নি। তবে চিঠি আসতে পারে। এরপর সেই চিঠির আলোকে আবারও মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হবে। এরপর স্ব-পদে বসতে পারবেন চেয়ারম্যান।
এর আগে, গত ১২ নভেম্বর আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দের অভিযোগ ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিধিবিধান ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই দপ্তরের কর্মকর্তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেন চেয়ারম্যান।
গত ১২ নভেম্বর মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও কার্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে, তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করা হয় ‘(বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?)’। এভাবে গালমন্দ করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সেই দিন রাতে ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ডিসি বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ১৬ নভেম্বর ৩৭ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় জেলা প্রশাসন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে গত ২৪ নভেম্বর সরেজমিন তদন্ত করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা।
নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি (নং ৫৫৮) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একই দিন যৌথ স্বাক্ষরিত উপজেলার রাজস্ব তহবিলের ব্যাংক হিসাবের ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। যা নিয়েও আদিতমারী থানায় জিডি (নং ৫৫৯) করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টেনোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান। একই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ইউএনও’র বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় জিডি করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক।
এদিকে, নয় দফা অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের প্রতি অনাস্থার প্রস্তাব তুলে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন উপজেলার আটজন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২১
এনটি