ঢাকা: জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন খ্যাতিমান ভাস্কর ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের উপদেষ্টা ভাস্কর রাশা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর গ্রেফতার দাবিতে রোববার (৬ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
ভাস্কর রাশা বলেন, আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে উলঙ্গ করে পেটানোর ঘোষণা দিয়েছেন পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আপনি তো সংসদ সদস্য হতে পারতেন না। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আপনি তো পটিয়ায় থেকে ছড়ি ঘুরাতে পারতেন না। অথচ মুক্তিযোদ্ধাকে আপনি অপমান করছেন। আমার মনে হয়, আপনার সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক থাকতে পারে। না হলে বারবার কেন আপনি মুক্তিযোদ্ধাকে প্রতিপক্ষ করছেন।
তিনি বলেন, আপনি সামশুল হক চৌধুরী আপনাকে বারবার আমরা দেখেছি মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করতে, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করতে। এই স্পর্ধা আপনি কোথা থেকে পাচ্ছেন?
ভাস্কর রাশা বলেন, আমি মনে করি সামশুল হক চৌধুরীর এই অপকর্মের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে। কারণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হলে মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা মানে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা। মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করা মানে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। আর কেউ যদি বাংলাদেশকে অস্বীকার করে তার তো ওই পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি মনে করি, আজকে যে প্রশ্ন উঠেছে তাতে সামশুল হক চৌধুরীকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা যায়। কারণ, তিনি মুক্তিযুদ্ধকে ওউন করেন না। এদের যদি বহিষ্কার করা না হয় তাহলে এরা গণ্ডায় গণ্ডায় জন্মাবে, এরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় জন্মাবে।
তিনি আরও বলেন, সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ পটিয়ার উদ্দেশে লং মার্চ করতে পারে। তাকে জানিয়ে দেওয়া দরকার আজকের বাংলাদেশে রাজাকারের ঠাঁই নাই। আমি বিশ্বাস করি এই আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। নয়তো এরা লাগামহীনভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করবে।
আরও পড়ুন: হুইপ সামশুল ও ছেলে শারুনকে গ্রেফতার দাবিতে আল্টিমেটাম
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আমরা দেখেছি গত বছর যখন ক্যাসিনো-কাণ্ডের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে তখন এই সামশুল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। আমরা আজকের এই মানববন্ধন থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানাবো, অবিলম্বে সামশুল হক চৌধুরীকে জাতীয় সংসদ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অবিলম্বে তাকে ও তার পুত্র শারুনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আল মামুন আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন সামশুল হক চৌধুরী শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লুঙ্গি খুলে পেটানোর হুমকিই দেননি, তিনি গত বছর চট্টগ্রামের আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দিদারুল আলমকেও হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল। আমরা সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম সামশুল হক চৌধুরী এবং শারুন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার সেই দাবি মেনে নেয়নি। যদি সেদিন আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হতো, তাহলে আজকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুদ্দিন আহম্মদকে হত্যার হুমকি দিতে পারতো না। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো আর কালক্ষেপণ নয়, আমরা সামশুল হক চৌধুরী ও শারুন হক চৌধুরীকে কারাগারে দেখতে চাই। আমরা আর তাদের রাজপথে দেখতে চাই না, পটিয়ায় দেখতে চাই না।
মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মিছিলে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র শারুনের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ জেড ইউ প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ