ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৪ মাসে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
৪ মাসে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু

ঢাকা: ২০২১ সালের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছে ৪৭ জন।

এর মধ্যে শুধু কৃষি কাজ করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের। বজ্রপাত ও কাল বৈশাখী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা গেছে ১৫ জন। ঘরে অবস্থানকালীন বজ্রপাতে ১০ জন, নৌকায় মাছ ধরার সময় ছয় জন মারা গেছেন। মাঠে গরু আনতে মারা গেছে পাঁচ জন। মাঠে খেলা করার সময় তিন জন ও বাড়ির আঙিনায় খেলা করার সময় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, ভ্যান/রিকশা চালানোর সময় দু’জন এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানকালীন বজ্রপাতে মারা গেছেন এক জন।

শুক্রবার (১১ জুন) নগরীর সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্ট্রম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ  তথ্য জানানো হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. কবিরুল বাশার, বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ ড. মুনির আহমেদ, এসএসটিএএফ- এর সাধারণ সম্পাদক রাশিম, গবেষণা সেলের নির্বাহী প্রধান আব্দুল আলীম প্রমুখ।  

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর মোট সংখ্যার মধ্যে পুরুষ মারা গেছে ১৪৯ এবং নারী ২৮ জন। নারী ও পুুরুষের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৩ জন, কিশোর ছয়জন ও কিশোরীর সংখ্যা তিনজন। চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না থাকলেও মার্চ মাসের শেষের দিন থেকে মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা যান ১৭৭ জন। অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছে ৬৫ জন।

মৃত্যুর পাশাপাশি এ বছর বজ্রপাতে আহত হয়েছে ৪৭ জন। এর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও সাত জন নারী রয়েছে।

বজ্রপাতে হতাহতের এ পরিসংখ্যান করা হয়েছে জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিউজ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।
  
এ বছর বজ্রপাতের হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এ জেলায় চলতি বছরের মে ও জুন মাসেই মারা গেছে ১৮ জন। এছাড়া চলতি বছরের চার মাসে জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোনায় ১৩ জন, চাপাইনবাবগঞ্জে ১৬ জন ও চট্টগ্রামে মারা গেছেন ১০ জন।

চলতি জুন মাসের ৬ তারিখ বিকেলে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার লোহাচড়া গ্রামে বৃষ্টির সময় বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল আশরাফি খাতুন (১০) ও মহসিনা খাতুন (১২) নামে দুই শিশু।  

ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার (৬ জুন)  দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বিকেলে বৃষ্টি নামতে শুরু করে। সঙ্গে চলে প্রচণ্ড মেঘের গর্জন। এ সময় ওই দুই বোন বাড়ির আঙিনায় ভিজতে শুরু করে। পরে বাড়ির পাশে গাছ থেকে আম পড়ার শব্দ পেয়ে আম কুড়াতে গেলে বজ্রপাতে শিশু দুটি মারা যায়। এ সময় বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়।  

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় বাড়ির উঠানে বজ্রপাতে তামান্না আক্তার (১৫) ও তার চাচাতো ভাই আল আমিন (৬) মারা যায়। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির সময় এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার সময় তারা দুই জন বজ্রপাতে আহত হয়। পরে দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কিছু দাবি করা হয়, বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানতে পারে কোনো কোনো এলাকায় বজ্রপাত হবে। এটাকে মোবাইল মেসেজ আকারে সংশ্লিষ্ট এলাকার সব মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঝড়/জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার যতটা তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যুর হার বজ্রপাতে। তবে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করলেও এ খাতে বরাদ্দ কম। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মাঠে, হাওর, বাওরে বা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার ওপরে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে। যেন বজ্রপাতের সময় কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেমের সব পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে। সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে। বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা/ থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
এমআইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।