ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুদে টাকা নিয়ে দোকান হারালেন নুরুল ইসলাম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
সুদে টাকা নিয়ে দোকান হারালেন নুরুল ইসলাম

টাঙ্গাইল: সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা করেও দখল করে নেওয়া মুদির দোকান দীর্ঘ এক বছরে ফিরে পায়নি নুরুল ইসলাম (৪৫)। দোকান ফিরে না পাওয়ায় ব্যবসা করতে না পেরে টাঙ্গাইল শহরে রডমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

 

অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের প্রফেসরপাড়া গ্রামে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর প্রফেসর পাড়ার মৃত মরতুজ আলীর ছেলে মো. নুরুল ইসলাম (৪৫) লতিফপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মুদির দোকানে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দোকানের মালামাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয় কয়েদ আলীর ছেলে সুদের কারবারী মো. জামিল মিয়ার (৫৫) কাছ থেকে বিগত ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নন-জুডিসিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে নাম-স্বাক্ষর করে প্রতিমাসে লভ্যাংশের ১০ হাজার টাকা সুদ হিসেবে দেওয়ার শর্তে তিনি দুই লাখ টাকা নেন। ওই টাকা নেওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে নুরুল ইসলাম নিয়মিত সুদের লভ্যাংশের ১০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সুদের লভ্যাংশের ১০ হাজার টাকা দিতে না পারায় তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের জের ধরে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। মামলার সময় সুদের কারবারী মো. জামিল মিয়া দুই লাখ টাকা দেওয়ার সময় জামানত হিসেবে রাখা নুরুল ইসলামের নাম-স্বাক্ষর করা নন-জুডিসিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে ‘টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দোকানের দখল বুঝে নেওয়ার’ শর্ত জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো স্ট্যাম্পে লিখে নেয়।

মামলা চলমান থাকাবস্থায় ২০২০ সালের ৫ জুন সুদের কারবারী মো. জামিল মিয়া তার ভাই ইয়াছিন (৫০), স্থানীয় সিফার উদ্দিনের ছেলে মো. আলা উদ্দিন (৪৫), তার ভাই আহসান মিয়া (৪০), মৃত আজগর আলীর ছেলে মো. কুদ্দুছ ফকিরের(৫৫) সহায়তায় নুরুল ইসলামের মুদির দোকানটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়।

মুদির দোকানী নুরুল ইসলাম জানান, সুদের কারবারি মো. জামিল মিয়া টাকা দেওয়ার সময় নন-জুডিসিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে নাম-সাক্ষর নেয়। পরে সুযোগ বুঝে সাদা স্ট্যাম্পে ‘টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দোকানের দখল বুঝে নেওয়ার’ শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে মামলা দায়ের করে। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মামলায় বিষয়টি দীর্ঘায়িত হওয়ায় তিনি জোরপূর্বক দোকান দখলে নিয়ে ভোগ করছে।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি স্থানীয় মাতব্বর, ইউপি চেয়ারম্যান ও মির্জাপুর থানায় একাধিকবার আবেদন- নিবেদন করেছেন। সুদের কারবারীরা সমাজে ব্যাপক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ সুষ্ঠু সমাধানে উদ্যোগী হয়নি।

অভিযুক্ত মো. জামিল মিয়া জানান, তিনি সুদের কারবারী নন। নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে নাম-সাক্ষর দিয়ে দোকান জামানত রেখে নুরুল ইসলাম তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার (কর্জ) নেন। মো. নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিনেও ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তিনি স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করেন এবং স্ট্যাম্পের শর্ত অনুযায়ী দোকানের দখল বুঝে নেন। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি করে মো. নুরুল ইসলাম স্থানীয় জামিল মিয়ার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন। পরে সালিশের মাধ্যমে দোকানটি মো. জামিল মিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আবার মো. নুরুল ইসলাম ওই দোকান তার বলে দাবি করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।