পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর ভাঙনে বর্ষা মৌসুমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। এদিকে ভারত থেকে আকস্মিক ছেড়ে দেওয়া নদীর পানির প্রবল স্রোতে নদীতে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমি।
বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি, স্থাপনা, ফসলি জমি ও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। বাড়ছে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যাও। তাই নদী ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও করেছে নদী তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখে জানা গেছে, জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার এবং সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর ভাঙনে দুই বছরে ভিটেমাটি হারিয়েছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার। এবারের বর্ষাতেও ভারত থেকে আকস্মিক ছেড়ে দেওয়া পানির প্রবল স্রোতে করতোয়া নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে।
উজানের পানি ছাড়াও করতোয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে হুমকির মধ্যে পড়েছে সোনাহার ইউনিয়নের টোপ কাচারীঘাট, গোপালবৈরাগীর ঘাট, সলিমনগর, গাইবান্ধা গ্রাম, বসুরহাট মালচন্ডি পাড়া, মাঝিয়ালী গ্রামসহ কমপক্ষে ১২টি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত চার/পাঁচটি সরকারি স্কুল, আশ্রয়ন প্রকল্প ছাড়াও হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি ও গাছপালা। জেলার সব নদ-নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ চান ঝুঁকিতে থাকা জনপদের বাসিন্দারা। অপরদিকে ভাঙন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামের মানুষ হুমাইর ডাঙ্গা এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে।
নদী পাড়ের মানুষেরা বাংলানিউজকে জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ১শ থেকে ১৫০ বিঘা মাটি নদীতে তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙনে জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। সরকারের কাছে তাদের আকুল আবেদন নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার। একইসঙ্গে নদী ভরাট করে আমাদের জমি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার।
স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে এক হাজারেরও বেশি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামগুলোও ভাঙনের পথে। এখনি সময় সরকারের পক্ষে এই বাকি জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিতু আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেকটি পয়েন্টে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এই বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙনের তিব্রতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এখনি রুখে দাঁড়াতে হবে। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রত্যয় হাসান বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙনের কারণে কয়েক হাজার বাড়ি, বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরো কিছু বাড়ি ও জমি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অতি দ্রুত যদি এখানে বাঁধ নির্মাণ করা না যায় তাতে দেখছি শুধু জীবনের ক্ষতিই নয়, প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কলে তিনি আরো জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২১
আরএ