বগুড়া: বিশাল দেহাকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম জুনিয়র জর্জ। ২৫ মণ ওজনের ষাঁড়টির দাম হাকা হয়েছে ৭ লাখ টাকা।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল গ্রামের রওশন আরা ডেইরি ফার্মে ওই প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ষাঁড়টির জন্মের পর থেকে ৩ বছর ৬ মাস ধরে ষাঁড়টির লালন-পালন করে আসছেন। তিনি গরুটির মালিক না হলেও ষাঁড়টির দেখভাল থেকে শুরু করে সবকিছু তার হাতেই। ফার্মের মালিক রেজওয়ানুল কবীর চৌধুরী আদর করে ষাঁড়টির নাম রেখেছে জুনিয়র জর্জ। অনেক সময় শুধু জর্জ বলেও ডাকা হয় ষাঁড়টিকে।
বগুড়া শহরতলীর বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে তোলা ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। ফার্মে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাম করেছেন এক ক্রেতা। কিন্তু মালিক ষাঁড়টি এ দামে ছাড়তে নারাজ। তার দাবি, এ দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান গুণতে হবে। তাই ষাঁড়টিকে দেখে-শুনে বিক্রি করতে চান তারা।
সোমবার (১৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটের প্রধান ফটক দিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই অসংখ্য গরুর মধ্যে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড়ের। এ স্থানে হাটের বড় বড় ষাঁড়ের বেচাকেনা হয়ে থাকে। তার মধ্যে জুনিয়র জর্জ নামে বড় ষাঁড়টির দড়ি ধরে বসে রয়েছেন জাহিদুল ইসলাম। হাটের মধ্যেই ষাঁড়টির মাথার কাছে চলছে ফ্যান। ষাঁড়টিকে দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আবার নেড়েচেড়ে দেখছিলেন।
রওশন আরা ডেইরি ফার্মের সুপার ভাইজার মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বাংলানিউজকে জানান, বেশ আদর যত্ন করে বড় করা হয়েছে জুনিয়র জর্জকে। সময় মতো তিনবেলা খাবার (ভুশি, ভুট্টার আটা, ধানের গুড়া, নেপিয়ার ঘাস, খুদ, খৈল, চিটাগুড়) সঠিক সময়ে খাইয়েছেন। জুনিয়র জজ একদম গরম সইতে পারে না। তার মাথার উপর ২৪ ঘণ্টাই ফ্যাল চালানো থাকে। আর দিনে দুইবার গোসল করানো হয়।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে গরুটির পেছনে তার জন্মের প্রথম বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বছর ১ লাখ টাকা ও তৃতীয় বছর ১ লাখ ৫০ হাজারসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিশাল ষাঁড়গুলো হাটে তোলা বেশ কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত তারা বাজারদর অনুসারেই বিক্রি করতে চান জুনিয়র জর্জকে। তবে বাজার যাচাই করেই বিক্রি করা হবে।
এদিকে গরুটিকে নিয়ে তারা কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কেননা করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বড় গরু কেনার মতো সচরাচর ক্রেতা ও পাইকার মিলেনি। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই না থাকায় বিশাল আকারের গরুটি নিয়ে স্থানীয় হাটে বেশ বিপাকেই আছেন ফার্মের কর্মকর্তারা।
বগুড়ায় গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়। খামারি ও পশু পালনকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণীসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৫ হাজার ৭৮৪ জন খামারি মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৯ হাজার ৪৯৪টি, গাবতলী উপজেলায় ৩১ হাজার ৩৯১টি, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ৩৩ হাজার ৪৬১টি, সোনাতলা উপজেলায় ২৫ হাজার ৭৮৭টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৩৯ হাজার ৮৬টি, কাহালু উপজেলায় ৩১ হাজার ৫১৯টি, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ২৮ হাজার ৬৪৩টি, আদমদীঘি উপজেলায় ২৬ হাজার ৮৪২টি, নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ৯০৬টি, শেরপুর উপজেলায় ৩৬ হাজার ৪৬৩টি, ধুনট উপজেলায় ৩৩ হাজার ৫৫৬টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫ হাজার ৯১৮টি গবাদি পশু রয়েছে।
এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভী) ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৬০টি, মহিষ ৩ হাজার ৩৮টি, ছাগল ১ লাখ ৩ হাজার ৯৯৫টি এবং ভেড়া ১৯ হাজার ৮৭২টি।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের মতো এ বছরও করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির হাট লাগার আগে থেকেই ভীষণ চিন্তিত ছিলেন খামারিরা। জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৩৮টির মতো এবং অস্থায়ী আরও প্রায় ৪০টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ পর্যায়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রি চলছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট পরিচালনার জন্য হাট ইজারাদারদের বার বার সচেতন করা হয়েছে।
জেলার কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদি পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে এমন মন্তব্যও করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২১
কেএআর